বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধ:পতন

| প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
\ শেষ কিস্তি \
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন অবস্থাপন্ন লোকের উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টির ওপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। পরিশেষে আমি তা সম্পূন্নরুপে ধ্বংস করে দেই। অপচয় না করা আবার সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে নিবুদ্ধিতার পরিচয় না দেয়া; সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা; হারাম ও ক্ষতিকর পণ্যদ্রব্যাদি বর্জন করা। আল্লাহ তা‘আলা ভাল জিনিষকে বৈধ করেছেন আর ক্ষতিকর ও নোংরা জিনিষকে হারাম করেছেন। আর ইসলামী আইনের একটি মৌলনীতি হল ক্ষতি করবে না ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। এ মূলনীতিটি রাসূলুল্লাহ ্স.- এর হাদীস দ্বারা স্বাব্যস্ত।
অহংকার কর না। যেহেতু ইসলাম ততটুকুই বৈধতা দিয়েছে যতটুকুর মধ্যে ব্যক্তি সমাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। অহংকার প্রদর্শনের জন্য সম্পদ ব্যয়কে ইসলাম অনুমোদন করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে ঈমানদার গণ, তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত বরবাদ করে না সে ব্যক্তির মত, যে নিজের ধন সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মৃসণ পাথরের মত, যার উপর কিছু মাঠি পড়েছিল।
অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূন্ন পরিস্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের স¤প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। নবী স. বলেন, যে ব্যক্তি অহংকার বশত তার কাপড়কে জুলিয়ে টেনে টেনে পড়ে, (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। ক্ষুধার মাধ্যমে মানবীয় চাহিদাকে বহিভূত করা। মানুষ যখন পানাহারে পরিতৃপ্ত হয় তার মধ্যে কু প্রবৃদ্ধি জেগে উঠে। আর ক্ষুধার্ত থাকলে শান্ত থাকে। আলীম ও ফকীহগণের কাছ থেকে ক্ষুধার বিভিন্ন উপকার বর্ণিত হয়েছে। যেমন : অন্তর পরিস্কার থাকে ও অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়; অহমীকা খারাবী দূরীভূত হয়; আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদ আপদের কথা স্মরণ হয়; কুপ্রবৃদ্ধিকে দমিয়ে রাখা যায়; ইবাদতে অধ্যবসায় বাড়ে; দান সদকা করতে মন চায়। ভালভাবে অর্থনীতি বুঝা যায়। অথ্যাৎ আয়ের উৎস ও ব্যয়ের ও ক্ষেত্র সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা রাখা। এক্ষেত্রে আমরা নবী জীবনের কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারি। যা নবী স. তার সাহাবীদের জন্য পেশ করে ছিলেন।
ক. এই শিক্ষা গ্রহন কর যে, অন্তরে অমুখাপেক্ষিতাই প্রকৃত অমুখাপিক্ষতা। আবু যার রা. বলেন নবী স. আমাকে বললেন, তুমি কি মনে করো যে, সম্পদ বেশি থাকাই ধনী হওয়া? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি স, বললেন, তুমি কি মনে করো যে, সম্পদ কম থাকাই দারিদ্রতা? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন নবী স. বললেন, প্রকৃত ধনাঢ্যতা হচ্ছে অন্তরের ধনাঢ্যতা প্রকৃত দারিদ্রতা হচ্ছে অন্তরের দারিদ্রতা। এ অর্থ হলো আয়ের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা, ব্যয়ের সময় হিসাব করে হিসাব করা।
খ. জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে ভালভাবে বুঝেশুনে করা। আবু সাইদ খুদরী রা. বললেন হতে বর্ণিত. কিছু সংখ্যক আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ স. এর নিকট কিছু চাইলেন তিনি তাদের দিলেন, পুনরায় তারা চাইলেন তিনি তাদের দিলেন। এমনকি তার নিকট যা ছিল সব শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে যাচনা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেওয়া হয়নি। সুতরাং মনের দিক থেকে অল্পে তুষ্ট থাকা, হাত না পাতা, ধৈর্য্য ধারন করা কাম্য। আর শারীরিক দিক থেকে কাম্য হল কাজ করে জীবিকা উর্পাজন করা। নবী স, বলেন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে বাজারে যায়, তারপরে সেখানে বিক্রি করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন, এটা মানুষের কাছে তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম; কারন মানুষ তাকে কিছু দিতে পারে। এজন্য মক্কার লোকেরা ব্যবসা করত, আর মদীনার লোকেরা চাষাবাদ করত। গ, নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে ব্যয় সীমাবদ্ধ করার শিক্ষা গ্রহন করা। নবী স, বলেন, একটি বিছনা স্বামীর জন্য. আরেকটি স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য আর চর্তুথটি শয়তানের জন্য। এর উদ্দেশ্য হল খরচ কম করা, যাতে করে ঋণ করতে অন্যের দ্বারস্থ হতে না হয় নিজের সম্পদ দ্বারাই যেন যথেষ্ট হয়। ঘ. দানের অভ্যাস করা। নবী স. বলেন, নিজের হাত থেকে উপরের হাত উত্তম। উপরের হাত হচ্ছে দাতা আর নিচের হাত হচ্ছে গ্রহীতা।
হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, সামাজিক বৈষ্যম দূর করা, যাতে দানকারীর সংখ্যা বেশি হয়, এবং গ্রহণকারীর সংখ্যা কম হয়। এভাবেই স. নবী তার প্রিয় সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারাও সেই শিক্ষা গ্রহন করে জীবনে বাস্তবায়ন করেছিল। দাওয়াতের ময়দানে এর বিশাল প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সুতরাং আমাদের উচিত হল, উক্ত চরিত্রগুলো নিজেদের মধ্যে সন্নিবেশ ঘটানো, মুসলিমদের ঐ চরিত্র থেকে দূরে থাকা উচিত, যা উক্ত উক্ত সুন্দর সুন্দর বিষয় গুলোকে ধ্বংস করে। আর এটা জানা উচিত যে যেই ব্যয় অহংকার প্রদর্শনের জন্য হয়ে থাকে তার মাধ্যমে শুধুমাত্র সমাজে দারিদ্রতাই বৃদ্ধি পায়। এজন্য মুসলিমদের উচিৎ সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। এর অর্থ এই নয় যে নিজের আয় থেকে উপকৃত হওয়া যাবে না বা আল্লাহর নি‘আমত এর সদ্বব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ইসলাম চায় মানুষ তার ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুক, ইসলাম ধোঁকাবাজিকে অপছন্দ করে আর অন্যের অনুসরন করতে গিয়ে অপচয় করাকে ও নিষেধ করে। অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর পানাহারের আয়োজন করা, বিশেষ করে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদিতে এগুলোর মাধ্যমে সম্পদ নষ্ট ও ভবিষ্যতের বিপদ ডেকে আনা হয়। সুতরাং প্রত্যেকটি মুসলিমের ক্ষেত্রেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ।
ইসলামী জীবন ধারায় অপচয় ও অপব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। উপর্যোক্ত আলোচনার মাধ্যম এটাই প্রমানিত হলো যে, ইসলাম অপচয় ও অপব্যয়কে ষ্পষ্টভাবে হারাম ঘোষনা করেছে। কোন মুসলিম কখনো তার অর্থ সম্পদের সামান্য অংশ অপচয় কিংবা অপব্যয় করতে পারে না। বর্তমান বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং দাদ্রিতা দূরীকরনে আর্ন্তজাতিকভাবে অপচয় অপব্যয় বন্ধ করতে হবে। তবে এটা শুরু করতে হবে নিজে থেকে। ব্যক্তি যখন নিজে অপচয় ও অপব্যয় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করে পরকালে জবাবদিহিতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে’ আয় এবং ব্যয় করবে তখনই কেবল অপচয় অপব্যয় বন্ধ হতে পারে অন্যথায় নয়। তাই ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পযর্šÍ সকলেরই এই অপচয় ও অপব্যয় থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থ সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এটাই শরী‘আহর অন্যতম উদ্দেশ্য। লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন