মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : ২৪ বছর ধরে চলে আসা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক শাসন ও শোষণের চূড়ান্ত প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালে। ’৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও কেবল পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল হওয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি সামরিক শাসক। বরং ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে শুরু করে নানা টালবাহানা। আর তাই নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত বাঙালিরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে থাকে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আর মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ ও ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে থাকে মার্চ মাসজুড়েই। বিশেষ করে ৭ মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর বাঙালিরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। অগ্নিঝরা সেই মার্চের আজ ১৫তম দিন। আজকের দিনটিও শান্তিপূর্ণ সভা-শোভাযাত্রা, সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত বর্জনের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। এছাড়া স্বাধিকার আন্দোলনে নিহত শহীদদের উদ্দেশে শোক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষাকে তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে। আজকের দিনে পূর্ব পাকিস্তানের পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিটি অন্য দিনের চেয়ে আরও বেশি জোরালো হয়ে ওঠে। এমন পরিবেশ পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনকারীদের বহুগুণ উৎসাহিত করে তোলে। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাম ও মহল্লায় শুরু হয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন। এদিকে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করে কর্মবিরতি পালন করে। অফিস-আদালতেও চলে পূর্ণ কর্মবিরতি। এমন এক উত্তাল দিনের বিকেল বেলায় পাকিস্তান বাহিনীর প্রায় সকল জেনারেলকে নিয়ে কঠোর সামরিক প্রহরায় ঢাকায় আসেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। যখন ইয়াহিয়া ঢাকার মাটিতে পা রাখেন, তখন সামরিক বাহিনীর নয়া বিধি জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সমাবেশের ডাক দেয়। বায়তুল মোকাররমের পাশে অনুষ্ঠিত সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন নূরে আলম সিদ্দিকী। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, শাজাহান সিরাজ প্রমুখ। জনসমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয় সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার। ওই সমাবেশে বক্তারা সমস্বরে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বাঙালির ওপর সামরিক বিধি জারি করার ক্ষমতা কারও নেই। তারা বলেন, গত ২৩ বছর যারা সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছে, তাদের সঙ্গে আর কোন আপস করা হবে না। ইয়াহিয়া ঢাকায় আসার পর কোন সাংবাদিক কিংবা বাঙালিকে এ সময় বিমানবন্দরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে ইয়াহিয়া আশ্রয় নেন প্রেসিডেন্ট হাউসে। তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ১৮ পাঞ্জাব ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়ন। আন্দোলনকারীদের উৎসাহ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে এইদিন নগরীর মোড়ে মোড়ে উদীচী ভ্রাম্যমাণ ট্রাকযোগে গণসঙ্গীত ও পথনাটক পরিবেশন করে। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন দেশাত্মবোধক গান।
বিকেলে কবি সুফিয়া কামাল ডাক দেন নারী সমাবেশের। তোপখানা রোডে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন সুফিয়া কামাল নিজেই। মিছিল শোভাযাত্রা বের করে বেসামরিক কর্মচারী ও চিকিৎসকরা। অন্যদিকে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কের জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং জাতীয় সরকার গঠন করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আজ আপনার পেছনে একই সঙ্গে রেডিও, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনী, সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবাহী।
১৫ মার্চ করাচিতে সংবাদ সম্মেলন করেন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করতে চাই না। কেননা এতে দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তান সব সময়ই পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাঙালিদের দ্বারা শাসিত হতে থাকবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণেই এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রযোজ্য হতে পারে না। কেন্দ্রে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে অবশ্যই তা পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে করতে হবে। তার মতে, দেশ শাসনের প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে অবশ্যই পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ইচ্ছার মূল্য দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন