শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দিনাজপুরে ধানের চেয়ে চারার দাম বেশী

বন্যায় সর্বস্ব হারানো কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সার-কীটনাশকসহ খরচ যোগাতে জরুরি স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ
ধানের চেয়ে ধান গাছের চারার দাম বেশী। দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলের বানভাসী কৃষকদের কেউ চারা বিক্রি করে আবার কেউ চারা ক্রয় করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত আগস্টের স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ বন্যার পর বাঁচা মরার সংগ্রামে কৃষকেরা বছরের প্রধান খাদ্য আমন ধান আবাদে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। বানের পানিতে ধ্বসে পড়া বাড়ী মেরামত না করেই আগে ক্ষতিগ্রস্থ আমন ধান আবাদে মনোনিবেশ করেছে। ইতিমধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ আমন ক্ষেতগুলি নুতন সবুজ ধান গাছে ভরপুর হয়ে উঠেছে। কিন্তু অর্থ সংকট বিপাকে ফেলেছে সহায় সম্বল হারানো কৃষক ও দিন হাজিরায় খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষদের। মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে চালের দাম বৃদ্ধি। কেননা বন্যায় মালামালসহ ঘর-বাড়ী সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ফলে এক বেলা খাওয়ার যোগাড় করাই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সার, কিটনাশকসহ আমন আবাদের খরচ যোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকেরা। এই মুহুর্তে সাহায্য নয় সহজ শর্তে ন্যুনতম কৃষি ঋণ পেলে বন্যায় সর্বস্ব হারানো কৃষকদের আমন আবাদকে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
স্মরনাতীতকালের বন্যায় এবার দিনাজপুরে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে কৃষি’র। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এবারের ভয়াবহ বন্যায় দিনাজপুরে সম্পূর্ণরুপে ২৫ হাজার ও আংশিকভাবে ১৬ হাজার হেক্টর জমির আমন চারা নষ্ট হয়ে যায়। তবে মাঠ পর্যায়ের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। বন্যার পানি দ্রæত নেমে যাওয়ায় এবং আমন আবাদের সময় থাকায় কৃষকেরা ধ্বসে পড়া বাড়ী ঘর মেরামত না করে নেমে পড়ে পুনরায় আমন ধান আবাদের জন্য। আমন আবাদের জন্য দরকার চারা। কিন্তু বীজ তলা বন্যায় ক্ষতি হওয়ায় চারা পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। কৃষি বিভাগ কিছু কিছু চারা বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগন্য। ফলে দিশেহারা কৃষকেরা ছুটতে থাকে আমন চারার জন্য। এ অবস্থায় বন্যাায় ক্ষতি হয়নি এমন আমন চারা রোপন করা জমি একমাত্র ভরসা হয়ে দাড়ায় কৃষকদের কাছে।
বন্যার পর এক বিঘা জমির আমন চারা বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। বীজ তলা থেকে এক বিঘা জমিতে চারা রোপনের জন্য খরচ পড়তো মাত্র এক হাজার টাকা। উপায় না পেয়ে কৃষকেরা কৃষকদের কাছ থেকেই বিঘা হিসাবে চারা ক্রয় করে। এক বিঘা জমির চারা ক্রয় করে তা দিয়ে তিন থেকে চার বিঘা জমিতে নুতনভাবে চারা রোপন করা সম্ভব হয়। একইভাবে যেসব কৃষকের আমন ধানের জমি বন্যায় ক্ষতি হয়নি বা আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তারা তাদের বাড়ী ঘর নির্মানসহ সাময়িক অর্থ সংকট দূর করতে আমন চারা বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকছে যে যে জমি থেকে চারা উত্তোলন করা হচ্ছে সেই জমিতে পুনরায় চারা রোপন করে দিতে হবে ক্রেতাকে। উল্লেখ্য বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপনের পনের থেকে বিশ দিনের মধ্যে তিন থেকে ৫টি গাছের একেকটি থোকা সৃষ্টি হয়। এই থোকা থেকেই একেকটি গাছ নুতনভাবে রোপন করে আবার রোপন করা হয়। এই হিসাবে বন্যায় বেঁচে যাওয়া আমন চারা বিক্রি করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছে আবার সর্বস্ব হারানো কৃষকেরা নুতনভাবে আমন আবাদের সুযোগ পাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ধান উৎপাদন কিছুটা হলেও কম হবে বলে কৃষকেরা জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন