বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সেফ জোন প্রস্তাব ষড়যন্ত্রমূলক -বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে সমগ্র বিশ্ব সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার এখনো দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব আছে। এমনকি রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকার প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব স্পষ্ট নয় দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘মিয়ানমারে গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলা হয়। জেনোসাইড ইন মিয়ানমার অ্যান্ড দ্য রোল অব বাংলাদেশ’ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম। গোলটেবিলে মালদ্বীপ ও নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত, ব্রিটিশ অ্যাক্টিং অ্যাম্বাসেডর, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, কুয়েত, ফ্রান্স, ইরান, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলংকা ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে। এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য মিয়ানমার সরকার দায়ী। তারা রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে নির্মুল করতে বদ্ধ পরিকর। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণ আদালত মিয়ানমার সেনা প্রধান ও অং সান সুচি কে অভিযুক্ত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের দ্বিধান্বিত ও বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ার কারণে। এটি জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রধানমন্ত্রীর সেফ জোন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহŸানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাখ্যান করা দুখঃজনক। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এজন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার। বিএনপি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। কারণ জিয়াউর রহমান (৭৮ সালে) ও খালেদা জিয়ার সময়েও (২০০৫ সালে) রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন তাদের ফেরত পাঠিয়ে নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীনরা দলীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
বৈঠকে খন্দকার মোশাররফ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এগুলো হলো- জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় আন্তর্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্ব দিয়ে এখনও রেজুলেশন নিতে পারেনি। আশা করি, তারা এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে মানবিক বিপর্যয় সমাধান হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় ইস্যুতে সরকার জাতীয় ও বিশ্বকে একত্রিত করলেও এখন উল্টো আমাদের, সরকারকে একত্রিত করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এখন কোন অবস্থানে আছে সেটি পরিষ্কার নয়। লোক দেখানোর কারণে সরকার অবস্থান নিয়েছে। সেফ জোন প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেফ জোন কোথাও কখনও কাজ করে না। কোনো দেশেই কাজ করেনি।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-চীন-রাশিয়ার বিতর্কিত ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে খসরু বলেন, ‘এই অঞ্চলের যারা বড় শক্তি তারা এক্সক্লুসিভ জাতির পক্ষে কাজ করছেন। যদি ক্ষমতাধররা এই কাজ করেন তবে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এটি শুধু মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।’ মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া আগের চুক্তিগুলো ভিত্তি ধরে কাজ শুরু করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘১৯৭৮, ৯৩ ও ২০০৫ সালেও এই সংকট দেখেছি। আন্তর্জাতিক চাপ দিয়ে বার্মিজ সরকারকে বোঝাতে হবে রোহিঙ্গারা যতই ক্ষুদ্র জাতিসত্ত¡া হোক না কেন তাদের নির্মূল করা যাবে না। এটা করা গেলে অনেকাংশে সংকট কমে যাবে। সেফ জোনের কথা বলে ছাড় দিলে চলবে না।’
বিএনপির গোলটেবিল বৈঠকে মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘পুরো জাতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেরা ঐক্য না করলেও সারাদেশের মানুষ এই ইস্যুতে এক। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিশেষ করে নারী এবং শিশুরা অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। ৫-১০ বছরের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। এই অবস্থায় একটি দল হিসেবে বিএনপির উচিৎ তাদের নিজেদেরই একটি কমিটি করে সারা পৃথিবীতে মুভ করা। কফি আনান রিপোর্টটি সারাবিশ্বে তুলে ধরা।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঐক্যমতে আসতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, ব্যারিস্টার নওশাদ জামিল ও এম মোর্শেদ খান। বৈঠকে দলের নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, আইন বিভাগের প্রফেসর আসিফ নজরুল, প্রফেসর আকতার হোসেন, প্রফেসর সদরুল আমিন, সাংবাদিক কবি আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, এস এম হাসান তালুকদার প্রমুখ অংশ নেন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সাইফুল ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম says : 1
কত নিছ মনের মানুষ হলে ঘরে বসেই এমন মন্তব্য করে, যে মন্তব্যের দরুন দেশের এবং জাতির বদনাম হয়। শুধু মাত্র ক্ষমতার জন্যে পুরো জাতিকে অপমান করছে এরা, এই রোহিঙ্গা ইসুতেও এদের নোংরা রাজনীতি আফসোস তমাদের জন্যে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন