শীতে আলাদা করে ঠোঁটের যত্ম নিতে হয়। এ সময় ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। অনেক সময় ভেজাল প্রসাধন ব্যবহার করে মুখ ও ঠোঁটের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই সবাই যেন ঘরে বসেই ঠোঁটের যত্ম নিতে পারেন এবং আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠতে পারেন সে লক্ষ্যেই এ আলোচনা।
মধু : ঠোঁটকে আর্দ্র রাখার জন্য মধু খুবই উপকারী। মধু ঠোঁটের উপর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। ঠোঁট পরিষ্কার রাখার জন্য এটি সবচেয়ে ভালো উপায়। এছাড়া মধু সূর্যের আলোর কারণে ঠোঁটের দাগও দূর করে।
ঘি : মধুর ন্যায় ঘিও ঠোঁটে কার্যকর ভূমিকা রাখে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক ফোঁটা খাটি ঘি ঠোঁটে প্রয়োগ করতে হবে। এর ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঠোঁট নরম ও কোমল হবে।
গ্রীন টি ব্যাগস : গ্রীন টি ব্যাগ পুরোনো একটি পদ্ধতি। একটি ব্যবহৃত গ্রীন টি ব্যাগ ঠোঁটের উপর চার মিনিট প্রয়োগ করতে হবে। এটি প্রতিদিন করতে হবে ঠোঁটকে আর্দ্র রাখার জন্য এবং আর্দ্রতা বাড়ানোর জন্য। ফাটা ও শুষ্ক ঠোঁট ভাল করার জন্য এটি সবচেয়ে ভাল প্রাকৃতিক পদ্ধতি। তবে আপনার বাসায় গ্রীন টি না পান করলে এটির বদলে অন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
লেবুর রস : লেবুর রস ত্বকের বয়সের দাগের বিরুদ্ধে কাজ করে। লেবুর রস ঠোঁটের স্পর্শকাতর ত্বকের পুষ্টি যোগায় এবং আগের চেয়ে নরম ও কোমল রাখে। একটি ছোট বাটিতে এক চা চামচ দুধ নিতে হবে এবং এর সাথে তিন ফোঁটা লেবুর রস মিশাতে হবে। তারপর বাটিকে ফ্রিজের মধ্যে এক ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর এটিকে ঠোঁটের উপর এবং পাশে লাগাতে হবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এটি পর পর তিন দিন প্রয়োগের পর ভাল ফল পাওয়া যাবে। এটি আপনি ক্রমাগত করতে পারেন ঠোঁটের বয়স কমানোর জন্য।
গোলাপ জল এবং গ্লিসারিন : গোলাপজল এবং গ্লিসারিনের মিশ্রণ খুবই উপকারী। এটি সুন্দর ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। টেবিল চামচের এক চামচ গোলাপজল এবং এক চামচ গ্লিসারিন মিশ্রণ করতে হবে। এটি বাড়ানো যাবে, তবে পরিমাণ হবে সমান সমান অর্থাৎ সমপরিমাণে মিশ্রণ করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন এবং গোলাপজলের মিশ্রণ ঠোঁট এবং মুখে প্রয়োগ করতে হবে। ৫ দিনের মধ্যে আপনার ঠোঁট ও চেহারা দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবেন।
গ্লিসারিন এবং মধু : মধু এবং গ্লিসারিন শুষ্ক ত্বক সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। এক্ষেত্রে এক চামচ মধু নিতে হবে এবং এর সাথে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন যোগ করতে হবে। এ মিশ্রণ ঠোঁটে প্রয়োগ করে ১৫ মিনিট পর অপসারণ করতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দ্বারা ঠোঁট ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন আবার প্রয়োগ করতে হবে এবং সারা রাত রাখতে হবে। এটি খুবই কার্যকর এবং ঠোঁটের ভাঁজ এবং দাগ পড়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
জজবা তেল : জজবাতেল প্রাকৃতিকভাবে খুব তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত শুষ্ক, ফাটা বা চ্যাপড্ ঠোঁট থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। কয়েক ফোঁটা জজবা তেল নিতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে এটি প্রয়োগ করতে হবে। ১৫ মিনিটের জন্য রাখতে হবে। জজবা তেল খুব তাড়াতাড়ি ঠোঁটের সমস্যা সমাধানে কাজ করে। ঠেঁটের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নতুন ত্বকের কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত কসমেটিকস কোম্পানিগুলো তাদের বিভিন্ন পণ্যতে জজবা তেল ব্যবহার করে থাকে।
শসা : শসা খুবই উপকারী। একটুকরা শসা ব্লেন্ডারে নিয়ে রস বের করে নিতে হবে। শসার রস ঠোঁটে প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া শসার রস চোখের নিচে কালো দাগ উঠাতেও সাহায্য করে থাকে।
চিনি প্রয়োগ : ঠোঁটে যদি মৃত কোষ থাকে তাহলে তা অপসারণ করতে হবে। রান্নাঘরেই চিনি পাওয়া যায়। আধা চা চামচ চিনি নিতে হবে এবং এর সঙ্গে দুই ফোটা অলিভ অয়েল মিশাতে হবে। এ মিশ্রণ দিয়ে খুবই আলতোভাবে ঠোঁটকে ঘষতে হবে যাকে স্ক্রাব বলা হয়। তিন মিনিট স্ক্রাবিং করার পর পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার কাপড় দ্বারা ঠোঁট শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠোঁটের উপর একটি ভাল প্রাকৃতিক বাম ব্যবহার করতে হবে। এ পদ্ধতি ঠোঁটকে উজ্জ্বল রাখবে এবং আগের চেয়ে নরম রাখবে।
গোলাপ জল এবং মধু : এ পদ্ধতি ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধ করবে এবং ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করবে। একটি বাটিতে এক চা চামচ গোলাপ জল নিতে হবে। এর সাথে এক চা চামচ মধু নিতে হবে। এ দুটি এক সাথে মিশিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিটের জন্য ঠোঁটে প্রয়োগ করতে হবে। তারপর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে ঠোঁট ও মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
ষ ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
শাহ আলী হাসপাতাল, মিরপুর-১, ঢাকা
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল : ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন