ঢাকা এবং লন্ডনের মধ্যে কার্গোবাহী সরাসরি বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ মার্চ ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি দিয়েছিলেন তার জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী চিঠিটি লিখেছেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিদেশি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা শাহজালাল (রহ.) বিমান বন্দরের বর্তমান নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিটিশ সংস্থার সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। এদিকে নীতি-নির্ধারকদের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সিরিজ আলোচনা সত্ত্বেও বিমান বন্দরের নিরাপত্তা প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের অবস্থানের এখনো কোন পরিবর্তন হয়নি। তাদের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকায় বসে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে। বিমান বন্দরকে ঘিরে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে বিশেষ করে কার্গো ভিলেজে শাসকদলের বিভিন্ন নেতার যে আধিপত্য সেটি ঠেকাতে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকার বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে যুক্তরাজ্য। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশনারের নেতৃত্বাধীন টিমের সাথে বেসরকারি বিমান চলাচলমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের যে বৈঠক হয়েছে তাতে ব্রিটেনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তা নাহলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারচেয়েও বেশি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতায় নতুনত্ব কিছু নেই। অনেক দিন ধরেই এনিয়ে কথা-বার্তা হচ্ছে। ৮মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি লিখেছেন তাতে তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে, সর্বশেষ মূল্যায়নে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ধারাবাহিকভাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি মিশর ও সোমালিয়ায় বিমানে হামলার পর এটি তার কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি উল্লেখ করেছেন, এটি স্পষ্ট যে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মূলে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী এবং যথাযথ নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো লিখেছেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দূর করার লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে একটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে কার্গো বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য রফতানিতে নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিজিএমই সভাপতি। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এবাজারে কোন রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়–ক তা কাম্য নয়। তিনি বলেছেন, এতদিন শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সরাসরি পণ্য পাঠাতে পারলেও এখন সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পাঠাতে হবে। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে যাবে। এতে করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা কমে যাবে বলে তিনি আশংকা করেছেন। ফলে রফতানি হ্রাস পাবে এবং বাজার হাতছাড়া হতে পারে বলেও তিনি ধারণা করছেন। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে আমাদের শাক-সবজি ও হিমায়িত চিংড়ি রফতানিতেও বড় ধরনের ধস নামার আশংকা রয়েছে।
যে কোন বিবেচনাতেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নেই। অনেকদিন থেকেই এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে। এখন পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হবার কারণেই নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর সিদ্ধান্তে গিয়ে পৌঁছেছে। এটা নিঃসন্দেহে অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন গত নভেম্বর থেকে আলোচ্য বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করছেন। তিনি এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ন্যূনতম ছাড় না দিতে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করলেও এটা পরিষ্কার যে, অভিযোগ সুনির্দিষ্ট অথচ এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কেন তার সমাধান করা যায়নি সেটি সত্যিই ভাববার। এখন যা ঘটেছে তার নানা নেতিবাচক প্রভাব যে দেশের অর্থনীতির উপর পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আস্থার সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি তথা ব্যবসা -বাণিজ্যের অবস্থা ভাল নয়, তার উপর এ ধরনের অবস্থা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিবেচিত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে যা কিছু দরকার তার সবটাই করতে হবে। সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন