স্টাফ রিপোর্টার : মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে খানিকটা এগিয়ে গেলেও এর বাস্তবায়ন রয়েছে অনেক পিছিয়ে। এই আইন সম্পর্কে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দোকানি ও সাধারণ মানুষের বিশেষ কোনো ধারণা নেই। তবে চিকিৎসকদের এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলেও তাদের মাধ্যমেই মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ব্যবহার হচ্ছে। যা শিশুর পুষ্টির জন্য মারাত্মক হুমকি।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক পরিচালিত ‘রোল অব স্টেকহোল্ডারস ইন বেষ্ট ফিডিং ইন দি লাইট অফ বিএমএস ল-২০১৩’ জড়িপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পিডিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীদারকে যার যার জায়গা থেকে নিবিড় দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আইন ভঙ্গের জন্যে মামলা হতে পারে। অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আইনটি চিকিৎসকরদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট প্রসূতি চিকিৎসাবিদ অধ্যাপক টি এ চৌধুরী বলেন, আইন ব্যবহার করে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, সিগারেটের বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে বন্ধ করা সম্ভব হলে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা সম্ভব হবে না কেনো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইপিএইচএন পরিচালক ডা. এবিএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত মোট প্রসবের মাত্র ৩৫ শতাংশ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়ে থাকে। বাকি ৬৫ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হয়। শিশুজন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বাড়াতে হবে। আর এ জন্যে তৃণমূলে কাজ করতে হবে। শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়াতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মায়ের বুকের দুধ পান নিশ্চিত করা হলে বিশ্বে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই লাখ বিশ হাজার শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। বাংলাদেশে ২০১১ সালে সদ্যজাত থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ যা বর্তমানে ৯ শতাংশ কমে ৫৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আবার গুড়া দুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে।
অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকেও জনবল ও সামর্থ্যরে দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে। বক্তারা দেশের পুষ্টিবিদদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার কতা বলেন। আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও গুড়াদুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর দৌরাতœ্য নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার কথা বলেন। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ড. কাওসার আফসানার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডভোকেসি ফর স্যোশাল চেইঞ্জ বিভাগের কর্মসূচি সমন্বয়কারী সদরুল হাসান মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)-এর সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম। অনুষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প সংক্রান্ত আইন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)-এর সভাপতি ডা. এস. কে. রায়। এ বিষয়ে একটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের গবেষক ফাহমিদা আক্তার। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিশু, পুষ্টি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমের কর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন