শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

৫ রিটার্নিং কর্মকর্তাই কর্মস্থলে গড়হাজির গৌরীপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও নেই কার্যকর পদক্ষেপ

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গৌরীপুর ময়মনসিংহ উপজেলা সংবাদদাতা : বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও গৌরীপুর উপজেলায় কর্মরত কোনো কর্মকর্তাই বিধি মানছেন না। এমনকি ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে যে ৫ কর্মকর্তা যথাক্রমে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা একেএম মোছা (রামগোপালপুর-বোকাইনগর), প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম (অচিন্তপুর-গৌরীপুর), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুর রহমান (মইলাকান্দা-সিধলা), উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন (সহনাটী-মাওহা), উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তারাপদ চক্রবর্তী (ডৌহাখলা-ভাংনামারী)কে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ-ই কর্মস্থলে রাত্রিযাপন না করে ময়মনসিংহে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন। যে কারণে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী ও সমর্থকদের দ্বারা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও শুধু প্রতীক বরাদ্দের দিন (সোমবার) দু’একটি ছাড়া আর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনা। যে কারণে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে অনেক প্রার্থীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররাও সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন।
প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ব্যানার ও প্রতীকে হওয়ায় উক্ত নির্বাচনকে ঘিরে ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন নির্বিঘœ করতে নির্বাচন কমিশনও প্রথমবারের মতো গৌরীপুরে ২টি নির্বাচনী ইউনিয়নের বিপরীতে একজন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেন নির্বাচনী এলাকায় বেশি সময় নজরদারি করতে পারেন, সে কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ালেও ফলাফল উল্টো হয়েছে। সকল রিটার্নিং কর্মকর্তাই গা-ছাড়া ভাবের পাশাপাশি কর্মস্থলে অনুপস্থিতির সুযোগে একের পর এক ঘটছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা।
২ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন প্রায় সকল প্রার্থীই বিশেষ করে সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিশাল বিশাল শোডাউন, শত শত মোটরবাইকের বহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন, যা পরদিন বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ধারণা করা হয়েছিল এর প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ‘ওয়ার্নিং নোটিশ’ প্রদান না করায় সকলে বিস্মিত হয়েছেন। বড় দু’দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত হবার পর থেকে তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় প্রতীক সম্বলিত পোস্টার দিয়ে ঘেরা নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেন। সেখান থেকেই প্রতিদিন মিছিল, সমাবেশ পরিচালনা করছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীরা প্রচারণা চালানোর বিরুদ্ধে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিশ্চুপ থাকার সুযোগে ১৪ মার্চ প্রতীক প্রদানের দিন তারা বহুগুণ উৎসাহিত হয়ে বাস, ট্রাক, লেগুনা, মোটরসাইকেল প্রভৃতির বহর সহকারে শত শত সমর্থক নিয়ে উপজেলা সদরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ‘মোবাইল কোর্ট জেলা প্রশাসক’ লেখা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের একটি গাড়ি দাঁড়ানো থাকলেও তাদের কোনো কর্মকা- চোখে পড়েনি। প্রতীক বরাদ্দের পর বিভিন্ন প্রার্থীর শত শত সমর্থক নিয়ে প্রতীকের পক্ষে দিন-রাত স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাখে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা সদর ও নির্বাচনী এলাকা। খোদ উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে এদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যাপক হারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। তবে দুপুর প্রায় সোয়া ২টায় গৌরীপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হযরত আলী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সমর্থকদের দুটি মিছিল উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় মুখোমুখি হলে তাদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জনের মতো আহত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এ সময় গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আখতার মুর্শেদের তৎপরতায় উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মোবাইল কোর্টের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদা আক্তারও একই সময় তৎপর হয়ে ৫ প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এহেন শিথিলতার সুযোগে প্রার্থী ও সমর্থকদের আচরণবিধি লঙ্ঘঘনের প্রতিযোগিতার কারণে সাধারণ ভোটারসহ অনেক শান্তিপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুর রহমান (মইলাকান্দা-সিধলা) সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার কথা স্বীকার করে রাজগৌরীপুরকে বলেন, বিভাগীয় কার্যক্রমের জন্য প্রায়শই জেলা সদরে উপস্থিত থাকতে হয়। যে কারণে তার পক্ষে সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। প্রায় একই বক্তব্য প্রদান করেন অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ।
প্রশ্ন করলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে উপজেলায় ১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তার স্থলে ৫ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৫ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তাই শুধু ছুটির দিন ছাড়া সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক। কি কারণে তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকছেন না তার খোঁজ নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি ৩১ মার্চের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন