বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: ঝড়-তুফান : দুর্যোগে কি করার নির্দেশ দেয় ইসলাম?


প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৮, ৭:৩৬ পিএম

উত্তরঃ ইসলাম বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির সৃষ্টি নয়, বরং জল-স্থল, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা ঘটে তা মহান আল্লাহর ‘কুন-ফায়াকুন’ এর ইশারায়। দুর্যোগ-দুর্ঘটনাও তার ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষের কৃতকর্ম। সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে বেশি। হাদিসে রসুল (সা.) প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজেও উম্মতের ওপর দুর্যোগের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন।
তিনি দোয়া করেছেন, যেনো তার উম্মতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে একসঙ্গে ধ্বংস না করা হয়। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রসুল (সা.) বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতেন এবং অন্যদেরও তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাতেন। 
হাল যামানায় অতি বৃষ্টি, ঝড়-তুফানের সময় অনেকে আযান দিয়ে থাকেন। আবার অনেককে ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ আর হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বাক্যদ্বয় ব্যতিত আযান দেয়ার নির্দেশ দিতে শুনা যায়। অনেক এলাকায় তো মসজিদের ইমাম কিংবা মোয়াজ্জিনকে বাধ্য করা হয়। তাদের ধারণা মত আযান শুনে আল্লাহ নাকি স্বীয় বান্দার প্রতি করুণা করে থাকেন। অথচ মারাত্মক ভুলের মধ্যে বিভোর আমরা। আমাদের উচিত সুদিনে আল্লাহর শোকর আদায় করা, দুর্দিনে সবর করা এবং তাঁর দেয়া আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, এই শোকর, সবর ও আশ্রয় প্রার্থনার ক্ষেত্রে একজন মুমিনকে প্রথমত ঐ আমলগুলিই করা উচিত, যা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টি দু’টোই বান্দার কষ্টের কারণ। এ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার সুন্দর নিয়ম যেমন ইসলামে রয়েছে তেমনি অতি বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়ার সুন্দর শিক্ষাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে দিয়েছেন। একজন মুমিনকে তাঁর শিক্ষা দেওয়া আমলের মাধ্যমেই আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা উচিত। সহীহ হাদীসে এসেছে, একবার মদীনায় এক সপ্তাহ একাধারে প্রবল বৃষ্টিপাত হল। অবিরাম বৃষ্টির সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহাবীগণ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর দরবারে দুআ করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন নবীজী এভাবে দুআ করেন, আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি, ওয়াজ জারাবি ওয়াল আশ জারি।
নবীজীর দোআর ফলে মুহূর্তে মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০১৪) 
এমনিভাবে ঝড়-তুফানের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররা মা ফিহা। 
আর বাতাস কমে বৃষ্টি নেমে এলে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল দেখা যেত। তখন তিনি আল্লাহর ‘হামদ’ করতেন, বলতেন, এটি ‘রহমত’। আরও বলতেন, আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিয়া। -ফাতহুল বারী ২/৬০৪, ৬০৮ অতএব হাদীসে বর্ণিত এসব দুআ, এছাড়া অন্যান্য দুআ-ইস্তিগফার বা ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে আল্লাহর কাছে এ সকল বালা-মুসিবত থেকে পানাহ চাওয়া উচিত। কিন্তু আযান তো ইসলামের অন্যতম শিআর। যার জায়গা ও ক্ষেত্রগুলো শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। তাই আসুন আমরা নিজেদের কৃতকর্মের উপর লজ্জিত, অনুতপ্ত হয়ে রাব্বে কারিমের কাছে তাওবা করে সকল অনিষ্টতা থেকে হেফাযতের দোয়া করি। 
উত্তর দিচ্ছেন : আতিকুর রহমান নগরী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন