উত্তর: শবেবরাত এবং এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করা নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসুল সা. ও সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে অদ্যাবধি এ রাতে বিশেষভাবে নফল ইবাদত ধারাবাহিকতার সাথে চলে আসছে। আরবিতে যেমন নামায রোজা নেই, এ শব্দগুলি ফার্সি হওয়ায় কুরআন হাদিসেও নেই। কিন্তু বিষয়গুলি ইসলামের ফরজ বিধান। তেমনই শবেবরাত কুরআন হাদিসে নেই। আরবি ভাষায় নেই। তবে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্যরাত আরবিতে হাদিসে বর্ণিত আছে। যার অর্থ শবেবরাত।
ইদানীং এক শ্রেণির লোক বাংলায় হাদিস পড়া ছাড়া যাদের কুরআন-হাদিসের আবশ্যিক কোনো জ্ঞান নেই। তারা নিজেদের অতি গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সুপ্রমাণিত বিষয়গুলোকে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
তারা বলছে শবেবরাতের হাদিসগুলো সহীহ নয়, এ রাতে ইবাদত করা বিদআত, ইত্যাদি। অথচ শবেবরাত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিদআত বলাটা হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনে এমনটি বলে থাকলে রাসূল সা. এর হাদিস অস্বীকারের মতো মারাত্মক অপরাধে অপরাধী সে ব্যক্তি। রাসূল সা. এর হাদিসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এ ফযীলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল: হযরত আলী বিন আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনো গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৮২২, }
হযরত আয়শা রা. বলেন, এক রাতে রাসূল সা.-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনারত কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রা. বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সা. তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবেবরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-১৫০৯}
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে] আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং-১৩৯০,
মুসনাদুশ শামীন, হাদিস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪}
বিষয়টি তাদের ঘরানার একজন আলেমের বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করছি।
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম শায়েখ আলবানী রহ. তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘এই হাদিসটি সহীহ’ এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন, মুয়াজ বিন জাবাল রা., আবু সা’লাবা রা., আব্দুল্লাহ বিন আমর রা., আবু মুসা আশয়ারী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু বকর সিদ্দীক রা., আউফ বিন মালিক রা., আয়েশা রা. প্রমুখ সাহাবাগণ।
উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন, সারকথা হলো, এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোনো দুর্বলতামুক্ত থাকে, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. তাঁর কিতাবে লিখেছেন, অতিতযুগের বড় আলেম ও শায়েখরা শবেবরাতে বেশি ইবাদত বন্দেগি করতেন।
সূত্র: জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফতওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন