বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইসিটি এন্ড ক্যারিয়ার

বিগো ও লাইকির মাধ্যমে প্রতিমাসে বিদেশে পাচার হচ্ছে শতকোটি টাকা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২১, ৮:১৭ পিএম | আপডেট : ৯:৫৭ পিএম, ১৩ জুন, ২০২১

প্রতি মাসে অবৈধভাবে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’র মাধ্যমে দেশ থেকে শতকোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এই অ্যাপে প্রধানত টার্গেট করা হয় দেশের যুবসমাজ ও প্রবাসীদের। যারা কথিত ডায়মন্ডের বিনিময়ে নির্ধারিত তরুণীদের অশ্লীল লাইভ আড্ডায় যুক্ত হন। এসব অ্যাপস ব্যবহারকারী লক্ষাধিক বাংলাদেশি অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কেনার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রবিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

অর্থপাচারের অভিযোগে সিআইডি শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এক বিদেশি নাগরিকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক, আসমা উল হুসনা সেজুতী ও অজ্ঞাত একজন বিদেশি নাগরিক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি তাদেরকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। সিআইডির সাইবার ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান জানান, গ্রেফতারকৃত বিদেশি নাগরিক ‘বিগো লাইভ’ ও ‘লাইকি’র সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লসিগের বাংলাদেশি অ্যাডমিন। আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এস এম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন। অ্যাডমিনরা মাসে এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।

বিদেশি নাগরিকের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার সঠিক নাম নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নাম বলা যাচ্ছে না। কামরুল আহসান আরও বলেন, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করে। বিগো লাইভ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অপরটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করে। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।এছাড়াও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদেরকে ডিজিটাল কয়েন সদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরবর্তীতে এই ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো। তাদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভন অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ডায়মন্ড নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় ব্যবহারকারীদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যতবেশি ডায়মন্ড উপহার পান, লাইভে তিনি ততবেশি অশ্লীলতা করেন।

সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকে একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি লক্ষাধিক অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শতকোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ডায়মন্ড কীভাবে কেনা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, বিগো লাইভ থেকে মেসেজ দিয়ে অথবা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে ডায়মন্ড কেনা সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন