সাধারণ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে টাকা পাচারের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এক ডজন ই-কমাস প্রতিষ্ঠানকে নজরদারীর মধ্যে রেখেছে একাধিক সংস্থা। একই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দারা। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সংকটকে পুঁজি করে ওইসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে এসেছে দীর্ঘদিন ধরেই। লোভনীয়, চটকদার ও ধামাকা অফারের খপ্পরে পড়ে পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম লাখ লাখ গ্রাহকের। আসল পণ্যের ছবি দেখিয়ে নকল পণ্য দেয়া ও বিকাশে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠানোসহ প্রতারণার যেন শেষ নেই তাদের।
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনায় আলাদা কোনো আইন নেই। তবে ন্যাশনাল ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ নামে একটি নীতিমালা থাকলেও তা কার্যকর নেই। আমরা চেষ্টা করছি নতুন করে আর যেন ঠগবাজ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে। এরই মধ্যে এক ডজন ই-কমাস প্রতিষ্ঠানকে নজরদারীর মধ্যে আনা হয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। এদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছেন। যা তদন্ত করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের অর্থ লোপাটের যে সব প্রতিষ্ঠানকে কড়া নজরদারির মধ্যে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে সে গুলোর মধ্যে ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউকম, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডট বিডি ও আলেশা মার্ট। এছাড়া এদের মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে যা তদন্ত হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সন্দেহজনক হওয়ায় বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানকে নজরদারীর মধ্যে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে র্যাবের কাছে লিখিতভাবেও অভিযোগ করেছেন যারা প্রতারণায় শিকার হয়েছেন। আমরা সব কিছুই আমলে নিয়ে তদন্ত করছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন অফারের নামে বাজার মূল্যের চেয়ে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে, পণ্য দেওয়ার আগেই টাকা নিচ্ছে অথচ সময় মতো পণ্য সরবরাহ করছে না সেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এরই মধ্যে লোভনীয় অফার দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম অর্থ গ্রহণ করে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের ক্ষেত্রে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ১২টির অধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে নজরদারীর মধ্যে রেখে তদন্ত করছি যেন গ্রাহক প্রতারণায় শিকার না হয়। একই সাথে সে সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই কত টাকার ব্যবসা করছে, কত টাকা লেনদেন করছে, তাদের মূলধনের পরিমাণ কত, এদের ব্যবসায়িক ধরণ সম্পর্কে জানতে মাঠে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, অন্তত আরও ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তারা লোভনীয় অফার দিয়ে নিরীহ লোকজনকে সর্বস্বান্ত করেছে। ইতিমধ্যে রাসেলের মতোই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অনুমতি মিললে তাদের আনা হবে আইনের আওতায়। তিনি আরও বলেন, ইভ্যালির রাসেল দম্পতির কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তাছাড়া পেছনে থেকে ওইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে যারা সহায়তা করেছে তাদেরও একটি তালিকা করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ই-অরেঞ্জের মালিক বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানাকে যেকোনো সময় দেশে ফেরত আনা হবে। আমরা ভারতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। তাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে ভারত ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে।
উল্লেখ্য, সা¤প্রতিক এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নতুন ব্যবসা পদ্ধতিতে অনলাইন বাজারগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে কয়েক মাস আগে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহ করতে আরও বেশি সময় নেয়। এছাড়া, প্রায়ই তারা ক্রেতাদের জানিয়ে দেয় যে, তাদের অর্ডার করা পণ্যগুলো শেষ হয়ে গেছে বিধায় সেটা পাঠানো সম্ভব নয়। তবে মাসের পর মাস অপেক্ষার পরেও প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ক্রেতারা তাদের টাকা ফেরত পান না বলে অসংখ্য অভিযোগ ওঠে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন