ফা হি ম ফি রো জ : এবার একুশে বই মেলায় আনন্দের সঙ্গে বিরক্তি ও কম নয়। বাংলা একাডেমি চত্বরে আয়োজিত দীর্ঘদিনের বই মেলার স্বল্প পরিসর নিয়ে লেখক-প্রকাশক এবং পাঠকদের খুব অস্বস্তি একটা ভাব ছিল। গত ক’বছর ধরে মেলার গলা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাশ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে দেখা দিয়েছে আবার নতুন সমস্যা। মেলায় আসা মানুষদের প্রিয় স্টল খুজে পেতে বেশ হাঁটতে হচ্ছে, কষ্ট করতে হচ্ছে : মেলায় কাউকে মোবাইল ফোনেও ধরা যায় না। মেলার কলরবে রিংটোন শোনা যায় না। সত্য হচ্ছে, একুশে মেলা দেখতে এখন যেন অগোছালো হাতের পাঁচ আঙ্গুল। মনে হয় অপরিকল্পিতভাবে উদ্যানের মেলা সাজানো হয়েছে। এসব নান কারণে মেলার অঙ্গবিন্যাস চিত্তাকষক নয়। আগামীতে মেলা কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি একটু শুভ দৃষ্টি দিলে ভালো হয়।
২. এতদিন কোলকাতা থেকে ঢাকার কিছু দুর্বল লেখকদের বই বের হতো। হাতে গোনা দু’একজন ভালো লেখকও এ তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। কোলকাতার কিছু লেখক এখন ঢাকা থেকে বই প্রকাশে আগ্রাহী। এর দুটি অর্থ আছে। প্রথমত. কোলকাতার থেকে এদেশে কবিতার বইয়ের পাঠক বেশি। দ্বিতীয়ত. এখান থেকে বই প্রকাশ করা সহজ। কারণ, একজন বাংলাদেশীকে বর্তমানে ভারতে ঢুকতে হলে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অন্যদিকে ভারতীয়দের এদেশে আনতে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। ফলে ভারতীয়রা দিন দিনই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এদেশের প্রতি উবু হচ্ছে। কিন্তু এর একটি ক্ষতির দিকও রয়েছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কবিতা ভারী শব্দ এবং ইংরেজি ভারে প্রায় নুব্জ্য কিন্তু আমাদের কবিতা এ অভিশাপ থেকে মুক্ত। এখান থেকে ভারতীয় যেসব কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলো কবিতা প্রেমীদের কোনোভাবেই টানতে পারছে না। বরং এদেশের কবিদের এসব কবিতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে এদেশী কিছু তরুণ বিনা কারণে কলিকাতা কবিদের দেখাদেখি নিজেদের কবিতার ইংরেজি শব্দের সম্ভার গড়ে তুলছেন। এতে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে আমাদের বাংলা কবিতার। কবিতায় নীরিক্ষা থাকবে, তাই বলে নীরিক্ষার নামে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার এমন করুণদশা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখতে হবে সাহিত্যের নামে আমরা যা রচনা করি তা যেন শাশ্বত বাংলা সাহিত্যের অপার সৌন্দর্যের সঙ্গে কিছুটা হলেও সাদৃশ্য থাকে। তা না হলে বর্তমানে সাহিত্যচর্চা ভুল পথে হাঁটবে। ৩. ভুল বাক্য, ভুল বানান, অপরিকল্পিত প্রচ্ছদ, অপ্রকাশনীয় বিষয়- আমার এসব নিয়ে এবার বই মেলায় প্রচুর বই প্রেস মুক্ত হয়েছে। পাঠক অতসব না বোঝে তাই কিনছে। এবং অশুদ্ধ সাহিত্যের নির্যাস পান করে বেড়ে উঠছে। এ আমাদের সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এটা বোধ করা জরুরি।
৪. রাজনৈতিক চেতনা থেকে একটি ভালো সাহিত্যকর্ম অনেক অনেক শক্তিশালী। প্রকাশ্য বা গোপন রাজনৈতিক চেতনা মাথায় রেখে এদেশে যারা লেখালেখি করেন, গ্রন্থ প্রকাশ করেন, তারা কসাইয়ের মতো রাজনৈতিক চেতনাকে সামনে রেখে একজন অন্য রাজনীতিতে চেতনায় বিশ্বাসী বা রাজনীতি সম্মুখ সাহিত্যিক নির্মমভাবে বছরের পর বছর পাথর চাপা দিয়ে রাখেন। আলো থেকে বঞ্চিত রাখেন। যদ্দুর জানা যায়, এজন্য প্রায় পত্রিকা অফিসে অখ্যাত কর্পোরেট সাহিত্য সম্পাদকদের দিয়ে এসব ক্ষতিকর কাজগুলো করা হয়। মালিক পক্ষ জানেনও না। ওরা তার পত্রিকার কর্পোরেট সাহিত্য সম্পাদক লেখক হিসেবে একেবারেই অখ্যাত, নিজের স্বার্থে কয়েকজনকে নিয়ে সিন্ডিকেট সাহিত্য করছেন। বাদ দিচ্ছেন নির্দলীয় খ্যাতিমান মৌলিক লেখকদের। অর্থাৎ তার পত্রিকায় সাহিত্য পাতা ধ্বংস করছেন। নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার জানালা খোলে বলতে পারি, কর্পোরেট এবং এক পেশে রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় আবদ্ধ সাহিত্য সম্পাদক দিয়ে মালিকদের সাহিত্য পাতা চালানো সম্ভব নয়। বলা যায় এরা সাহিত্য পাতায় নোংড়া ব্যবসা খোলে বসেছেন, এ বিষয়ে মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন