মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই কুমিল্লার চান্দিনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এমপির দ্বারে দ্বারে ঘুরতে শুরু করেছেন। তবে বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, তৃণমূলকে উপেক্ষা করে এমপি মহোদয় প্রার্থী চূড়ান্ত করলে তা হবে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। এতে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন। আর তা হলে নির্বাচনে দলের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চান্দিনা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের দারস্থ হচ্ছেন। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রতিটি ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে এমপিকে খুশি করার চেষ্টা করছেন। এমপি মহোদয় ঢাকা থেকে এলাকায় এলেই তাদের ঘিরে রাখছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। চান্দিনা আসনের এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ অধিকাংশ সময় ঢাকায় নিজ বাসভবনে থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি বর্তমানে নিজ এলাকায় বেশি অবস্থান করছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বৈঠক করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে। এছাড়া প্রতিদিন তার বাড়িতেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, এমপি মহোদয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নৌকা প্রতীক দেয়ার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী এমপির নামে এই আশ্বাসবাণী ফলাও করে প্রচারও করছেন। কিন্তু যারা এগুলো করছেন, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগে নতুন। এমপি মহোদয় তাদের মনোনয়ন দিলে সিদ্ধান্ত ভুল হবে বলে এসব তৃণমূল নেতা-কর্মী মনে করেন। প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রেুাহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাবেন। এটা হবে দলের জন্য ক্ষতিকর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দিনা উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এই প্রতিবেদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা সভাপতি ও সম্পাদকের ওপর। কিন্তু স্থানীয় এমপি মহোদয় যদি কারো প্ররোচনায় পড়ে নব যোগদানকারী সুবিধাভোগী লোককে মনোনয়ন করলে তা কেউ মেনে নেবেন না। অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অলিল সরকারের ছেলে ঈমাম সরকার তার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু অনেকেই নতুন করে দলে নাম লিখিয়ে প্রার্থী হতে চাইছেন। এমন অনেক প্রার্থী এমপি মহোদয়ের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। অনেকেই মনোনয়ন পাবেন বলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগে বড় ধরনের ধস নামবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি তার বাবা প্রবীণ রাজনীতিবীদ অলিল সরকারের মনোয়ন দেবার জন্য স্থানীয় এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ ও তার ছেলে মোনতাকিম আশরাফের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে চান্দিনা উপজেলা আত্তয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা জজ কোর্টেও স্পেশাল পি.পি এডভোকেট মহিউদ্দিন আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী নির্ধারণে আমাদের তেমন সুযোগ নেই। তবে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের লক্ষ্যে কোনো প্রার্থীর প্রতি মৌন সমর্থন থাকতেই পারে। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উপজেলা কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে, তারাই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। ফলে নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন