ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে চীনের নীতি দিল্লির কাছে চেনা বিপদ কিন্তু ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বাড়বাড়ন্ত আরও বড় সংকট বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। গত শুক্রবার পোর্ট ব্লেয়ারে ভারত মহাসাগরীয় এলাকার ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা সভায় উঠে এলো সেই উদ্বেগের কথাই। কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ (আইএসসিএস), আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন এবং তিন বাহিনীর যৌথ কমান্ডের উদ্যোগে আলোচনা সভা বসেছে দ্বীপপুঞ্জের রাজধানীতে। পানিসীমায় জঙ্গি কার্যকলাপের বিপদ নিয়ে আলোচনার সুর বেঁধে দেন আন্দামানের লেফটেন্যান্ট গভর্নর এ কে সিংহ। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের আগে তিনি সাদার্ন কমান্ডের প্রধান ছিলেন। এ কে সিংহের মতে, ভারত মহাসাগরের পরিস্থিতি শুধু সমুদ্রেই সীমাবদ্ধ নয়। পশ্চিম এশিয়া বা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের ঘটনার প্রভাবও সাগরের উপরে পড়বে। স্থলে জঙ্গিরা সক্রিয় হলে তার সরাসরি প্রভাব জলসীমায় পড়তে বাধ্য। ২৬/১১ হামলার পরে জলপথে জঙ্গি হানা নিয়ে নতুনভাবে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হয়েছে ভারত। সম্প্রতি বিশাখাপত্তমে আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়ায় জলপথে জঙ্গি হানার বিপদ নিয়ে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আন্দামানে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাও এক বাক্যে জানালেন, সমুদ্রপথে হামলা এখন কোনো অভিনব বিষয় নয়। করাচি নৌসেনা ঘাঁটিতে আল কায়দার হামলা, আরব সাগরে মার্কিন জাহাজে তালিবানি হানার ঘটনাই তার প্রমাণ।
জঙ্গি বিপদের কথা বোঝাতে গিয়ে প্রাক্তন সেনাকর্মকর্তা এ কে সিংহ বলেছেন মালদ্বীপের কথা। সেনাকর্মকর্তা হিসেবে ভারত মহাসাগরীয় ওই দ্বীপরাষ্ট্রে সফর করতে গিয়েছিলেন তিনি। তার কথায়, মালদ্বীপ থেকেও যুবকরা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে বলে আমাকে জানিয়েছিল সে দেশের প্রশাসন। তাহলে আমরা বাঁচব কীভাবে। একই মত প্রাক্তন নৌসেনা কর্মকর্তা শেখর সিনহারও। তার কথায়, বিপদ মারাত্মক। ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, তালিবানের মতো গোষ্ঠীগুলোর উৎপত্তি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই। এই অজানা বিপদের মোকাবিলা করা আরও কঠিন। চেন্নাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভি সূর্যনারায়ণের মতে, আন্দামানের শেষ ভূখ- ইন্দিরা পয়েন্ট থেকে ইন্দোনেশিয়ার দূরত্ব যে চেন্নাই থেকে তিরুপতির দূরত্বের চেয়েও কম তা খুব কম মানুষই জানেন। ফলে, মূল ভূখ-ে বসে অনেকেই পানিপথের বিপদের কথা পুরোপুরি বুঝতে পারেন না বলে মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিপদের মোকাবিলা করা যাবে কী করে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারত মহাসাগরীয় এলাকার অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা ছাড়া অন্য পথ নেই। আর সেখানেই উঠে আসছে ‘চেনা বিপদ’ চীনের কথা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সি রাজামোহন স্পষ্টই জানালেন, এই এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর খেলায় চীন এক ফোঁটাও জমি ছাড়বে না ভারতকে। দিল্লিকে বেজিংয়ের পাল্টা নীতি নিয়ে সাগরে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজামোহনের মতে, স্বাধীনতার পরে দেশের কোনো মহাসাগরীয় নীতি ছিল না। নরেন্দ্র মোদী অন্তত পাঁচ দফা নীতি তৈরি করে সক্রিয় থাকার বার্তা দিয়েছেন। কলকাতার আইএসসিএসের কর্মকর্তা অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের মতে, উপকূলে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ও জরুরি। সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের হাজির করানোর উদ্দেশ্য সেটাই। ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন