এম এইচ খান মঞ্জু : সিএনজি অটোরিকশার মালিক ও চালকদের যথেচ্ছতা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। কিছুতেই থামছে না যাত্রীভাড়ার নৈরাজ্য। সরকারের সঙ্গে অটোরিকশা মালিক ও চালকদের বৈঠকে যাত্রীভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, এবার থেকে চালকরা মিটার রিডিং অনুযায়ী ভাড়া নেবে। কিন্তু চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী আপ্তবাক্যের যথার্থ প্রতিবিম্ব হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করাকে কর্তব্য বলে বেছে নিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকরা। ফলে রাজধানীর সাধারণ যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন এদের অশুভ জোটের কাছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক জরিপেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে চলাচলকারী ৬২ শতাংশ অটোরিকশা চুক্তি অনুযায়ী যাত্রী বহন করে না। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশা চালকদের ৮১ শতাংশ বকশিশ দাবি করেন। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৩ ভাগ অটোরিকশা। মিটারবিহীনভাবে চলাচল করছে ৩৮ শতাংশ।
গত বছরের শেষ ভাগে সিএনজির যাত্রীভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের লক্ষ্যে। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের অশুভ ঐক্যের কাছে সে প্রত্যাশা মার খেয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের নজরদারি না থাকায় তারা যথেচ্ছতাকে অনুকরণীয় বলে ভাবছে। চাহিদার তুলনায় সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীরা সিএনজি চালকদের বাড়াবাড়ি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী ভাড়া নিয়ে যে যথেচ্ছতা রয়েছে তা বন্ধের প্রকৃষ্ট পথ হলো চালকদের কিস্তির মাধ্যমে সিএনজি অটোরিকশা সরবরাহ করা। চাহিদা অনুযায়ী অটোরিকশা চালু হলে এ ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব হবে। যাত্রীরাও ন্যায্য ভাড়ায় চলাচলের সুযোগ পাবে। বাড়তি ভাড়া বন্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান চালানোর বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা প্রমাণিত হলে অর্থদ-সহ জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করা হলে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের দৌরাত্ম্যে লাগাম পরানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। এ দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নানারকম সমস্যাও বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যা যেন জনসম্পদে রূপান্তর হয় সেই দিকটি অগ্রগণ্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানারকম সমস্যার মধ্যে পরিবহন সঙ্কট ও রাজধানীর তীব্র যানজট একটি বড় বিষয়। যেভাবে রাজধানীতে মানুষ বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না পরিবহন। ফলে ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
ভাড়া নৈরাজ্য দূর করা যায়নি। শৃঙ্খলা ফেরেনি গণপরিবহনে। প্রচলিত আইন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতকে উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই। ঢাকার গণপরিবহনে আইন না মেনে চলা আরেকটি বাহন হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। রাজধানীতে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিটারের চেয়ে তিন গুণ ভাড়াও গুনতে হয় যাত্রীদের।
যে কোনো জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির চাপ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই গড়ায়। তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক ছুতোয় পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়। অসহায় যাত্রীদের তা মেনে নিতে হয়। আদালত বসিয়েও ভাড়া নৈরাজ্য দূর করা যায় না। গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে যাত্রীরা অসহায়। যাত্রীস্বার্থ দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। দেশের প্রচলিত আইন মানতে সবাই বাধ্য। কিন্তু এই আইনের প্রতি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কোনো শ্রদ্ধা আছে বলে মনে হয় না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা কি মিটার উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারতো? উপরন্তু তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করেই যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়।
এই নৈরাজ্য দূর হবে কবে? অভিজ্ঞ মহলের মতে, গণপরিবহনে আইনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা না গেলে ূভাড়া সন্ত্রাস’ দূর করা যাবে না। বিআরটিএ ও পুলিশ আন্তরিক হলে গণপরিবহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নৈরাজ্য দূর করে যাত্রীস্বার্থ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট মহল কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রী কলেজ গোপালগঞ্জ, সাবেক সংসদ সদস্য, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন