রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

উত্তর সিরিয়ায় স্বায়ত্তশাসন ঘোষণা করবে কুর্দিরা, দামেস্ক-আংকারার তীব্র ক্ষোভ

সিরিয়াকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করার চক্রান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছে জেনেভায়

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন ঘোষণা করতে যাচ্ছে দেশটির কুর্দি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠনগুলোর জোট (পিওয়াইডি)। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গোটা সিরিয়াকে কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার প্রস্তাব নিয়ে যখন সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বিতর্ক চলছে, তখনই কুর্দিরা এই ঘোষণা দিল। কুর্দিদের এই সম্ভাব্য পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে সিরীয় সরকার এবং একই রকম প্রতিক্রিয়া এসেছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র তুরস্কের পক্ষ থেকেও। এদিকে সিরিয়ার সরকারপক্ষের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে কোনো সম্মুখ আলোচনায় বসবেন না তারা।
বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে বলা হয়, সিরিয়ার আলেপ্পোর আফরিন, কোবানি এবং হাসাকেহ প্রদেশের জাজিরা এলাকা নিয়ে একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে কুর্দি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র বাহিনীগুলোর জোট। জেনেভায় শান্তি আলোচনায় যে দলগুলো যোগ দিয়েছে তাতে অবশ্য পিওয়াইডি নেই। ইদ্রিস নাসান নামে সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও পিওয়াইডির সাবেক নেতা জানান, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিজস্ব প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করবেন তারা এবং শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি বলেন, ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা কেবল উত্তর সিরিয়া অথবা কুর্দি অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নয়, বরং এটি পুরো সিরিয়ারই ভবিষ্যৎ। কারণ এমন সরকার ব্যবস্থাই দেশে গণতন্ত্র ও সমতা নিশ্চিত করতে পারবে।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে গত কয়েক বছরে কুর্দি সংগঠনগুলো ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। এই অঞ্চলগুলোতে কুর্দি জাতিগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে কিছু আরব ও ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী তুর্কমেনের বাসও আছে এখানে। ২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ বড় আকার ধারণ করলে কুর্দি এলাকাগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে আসে সিরীয় সরকার। এরপরই কুর্দি সশস্ত্র সংগঠনগুলো দ্রুত এই এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। সিরিয়ার ওই অঞ্চলে কুর্দিরা সত্যিকার অর্থে ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা করলে তা হবে প্রতিবেশী তুরস্কের জন্য সতর্কবার্তা। কারণ দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদে আক্রান্ত। এদিকে জেনেভায় সিরিয়ার প্রধান বিরোধী জোটের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে সরকারি প্রতিনিধি দল। এর আগে গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিরোধী জোট সউদি-সমর্থিত উচ্চ মধ্যস্থতাকারী কমিটি (এইচএনসি) জানায়, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় জেনেভায় চলমান শান্তি সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। এর প্রতিক্রিয়াতেই এই বিবৃতি দেয় সরকারপক্ষ। বুধবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এইচএনসির ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জাতিসংঘে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত ও শান্তি আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধি দলের প্রধান বাশার জাফারি। একই সঙ্গে এইচএনসিকে ‘সন্ত্রাসীদের জোট’ বলেও অভিহিত করেন তিনি। জাফারি বলেন, ‘সৌদি সমর্থিত এইচএনসি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। যোগ্যতা কিংবা অধিকার কোনোটিই তাদের নেই। কারণ হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে তারা হত্যা করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইছে, তাদের সঙ্গে কোনো সরাসরি আলোচনায় বসছি না আমরা।’
অন্যদিকে সিরিয়া সংকট নিরসনের পদক্ষেপ হিসেবে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দুই পক্ষের সঙ্গেই কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ উপ-দূত রামজি এজেলদিন রামজি। গত বুধবার জেনেভায় তৃতীয় দিনের শান্তি আলোচনা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে রামজি বলেন, সংকট সমাধানে অনেকগুলো বিষয়েই দুই পক্ষের মতপার্থক্য কমে আসতে শুরু করেছে। তবে সমঝোতা থেকে এখনো অনেক দূরে আমরা। আশা করছি, আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা শিগগিরই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারব।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া জেনেভা বৈঠকের লক্ষ্যÑ ২০১৬ সালের শুরু থেকে সিরিয়াবিরোধী ও সরকারপক্ষের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক শুরু করা এবং ছয় মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা ও নতুন সংবিধান তৈরি করা। এ ছাড়া সিরিয়ায় ২০১৭ সালের মধ্যে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলা হয়েছিল। বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন