শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইইউ’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর তুরস্কে ১৭শ’ শরণার্থী আটক

অর্থ সহায়তাসহ তুরস্কের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণের অঙ্গীকার

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরীয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত শুক্রবার ২৮ জাতির এ জোটের বৈঠকে নেতৃবৃন্দ চুক্তিটি চূড়ান্ত করেন। এই চুক্তির অধীনে তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয় ৭২ হাজার শরণার্থীকে বসবাসের সুযোগ দেবে ইইউ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে তুরস্ক লাভবান হবে। কেননা এতে তারা একদিকে যেমন আর্থিক সহযোগিতা পাবে তেমনি অন্যদিকে ইইউ-এর সদস্যপদ প্রাপ্তির পথ সুগম হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হবে। কেননা এ আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধ না করলে আশ্রয়প্রার্থী কাউকে বহিষ্কার করা বা দেশান্তরী করা যায় না। এ বিষয়ে এক টুইট বার্তায় ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানান, তুরস্কের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ নেতার চুক্তিটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। অন্য এক সূত্র জানায়, এ চুক্তির আওতায় যেসব অভিবাসন প্রত্যাশী ও শরণার্থী আজ রোববার দিবাগত মধ্যরাতে গ্রিসে প্রবেশ করবে কিন্তু আশ্রয় পাবে না তাদের আবার তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে। আর বিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয় কয়েক হাজার শরণার্থীকে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেবে।
এদিকে, ব্রাসেলসে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই তুরস্কে উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে এক হাজার সাতশ’ ৩৪ শরণার্থী এবং ১৬ পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। গ্রিসের লেসবস দ্বীপে শরণার্থী প্রবেশ ঠেকাতে গত শুক্রবার ওই অভিযান চালানো হয়। তুরস্কের আজিয়ান উপকূলের ইজমির প্রদেশের দিকিলি শহরে যৌথ অভিযান চালায় উপকূলরক্ষী এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা। এদিকে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতগলু গত শুক্রবার ইইউ নেতৃবৃন্দকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউরোপে শরণার্থীদের স্রোত ঠেকাতে আঙ্কারার প্রস্তাবটি মানবিক, দর কষাকষির কোন বিষয় নয়। তিনি আরো বলেন, তুরস্কের জন্য এই ইস্যুটি দর কষাকষির কোন বিষয় নয়, বরং এটি মানবিক মূল্যবোধের পাশাপাশি ইউরোপীয় মূল্যবোধেরও বিষয়।
গত শুক্রবার সকালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতগলুর সঙ্গে আলোচনার পর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের কাছে প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তি অনুমোদন করার সুপারিশ করেন এবং ব্রাসেলস সম্মেলনে নেতারা এ ব্যাপারে দ্রুতই রাজি হন। তবে ডোনাল্ড টাস্ক চুক্তিটি সর্বসম্মতভাবে চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আগেই সম্মেলনের বৈঠক চলার মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বহুসøাভ সবৎকা টুইটে ঘোষণা দিয়ে জানান, তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি অনুমোদন পেয়েছে। সমস্ত অবৈধ শরণার্থী যারা তুরস্ক হয়ে গ্রিসে পৌঁছেছে তাদের ২০ মার্চ থেকে ফিরে যাওয়া শুরু করতে হবে। ইইউ-র শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ইইউ নেতারা প্রস্তাবিত চুক্তিতে অনুমোদন দিলে আঙ্কারা তা মেনে নেবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী দাভুতগলু। তিনি খুব শিগগিরই ইইউ নেতাদের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনে যোগ দেবেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আঙ্কারা তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করা সব শরণার্থীকে ফেরত নেবে। বিনিময়ে ইইউ তুরস্ক থেকে সরাসরি কয়েক হাজার সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। সেই সঙ্গে তুরস্ককে আরো অর্থ সহায়তা দেয়ারও অঙ্গীকার করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩ সদস্যের শেনজেন অঞ্চলে তুর্কি নাগরিকরা অবাধ বিচরণ অর্থাৎ ভিসা-ফ্রি ভ্রমণের সুযোগ পাবে এই চুক্তির আওতায়। এবং সব শেষে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তুরস্ককে ইইউ’র সদস্য-পদ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা আবার শরু করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
তুরস্কের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, খুব সম্ভবত ৪ এপ্রিল থেকে শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। একই সঙ্গে তুরস্কে অবস্থিত সিরীয় শরণার্থীদের ইউরোপে পুনর্বাসন কার্যক্রমও শুরু হবে। ২০১৮ সাল নাগাদ শরণার্থীদের জন্য অর্থ সাহায্য দ্বিগুণ করার বিষয়েও একমত হয়েছে উভয় পক্ষ। বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন