শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

আমার বাচ্চা খেতে চায় না!

নাতাশা খান | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৬:৫৩ পিএম | আপডেট : ৬:৫৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুটি যেকোনো সময় যেকোনো খাবার খেতে না চাইলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবে না এমন মা পাওয়া কঠিন। অস্ট্রেলিয়াতে পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায় ১০-এর মধ্যে আটজন মা-বাবাই তাদের সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস নিয়ে দুশ্চিন্তা করে আর এক তৃতীয়াংশের উদ্বেগ বাচ্চা যথেষ্ট খাচ্ছে না।
বাংলাদেশে এমন জরিপ কদাচিত পরিচালিত হয়েছে, সুতরাং এমন তথ্য দেয়া গেল না, তবে নিশ্চিত করে সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুরা খেতে গিয়ে ঝামেলা করবে এমনটাই স্বাভাবিক। ভাবতে পারেন আপনের বাচ্চাটিই অন্য আর যে কোনো বাচ্চার চেয়ে কম কম খাচ্ছে, আর এই দুশ্চিন্তায় আপনার ঘুম হারাম হয়ে গেছে; মনে রাখবেন সবার না হলেও সবার না হলেও অধিকাংশ মায়ের অবস্থা এমনটিই।

আর খাবার নিয়ে ঝামেলা করা সদ্য হাঁটতে শেখা আর মাকে যন্ত্রণা দেয়া শিশুদের মধ্যে ক'জন অসুস্থ বা পুষ্টিহীন হয়ে বেড়ে ওঠে? একেবারে নগণ্য সংখ্যক! সুতরাং মাতৃত্বের একটি অভিন্ন ও স্বাভাবিক পর্যায় অতিক্রমকালে আপনি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন আপনার এমনটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে। কেউ দাবি করে না যে মায়ের ভূমিকা খুব সহজ। খেতে ঝামেলা করা শিশুদের খাওয়ানোটা যুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে তা ঠিক, তবে তাতে শঙ্কার কিছু নেই।
আপনার সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চাটির খাবার ঝামেলা কখন ঝুঁকি আর তার জন্য চিকিৎসকের সাহায্য নেবার প্রয়োজন? নিজেকেই নিচের প্রশ্নগুলো করুন :
 আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কি আপনার শিশুর দৈহিক বিকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন?
 আপনার শিশুর ওজন কি গড়ের চেয়ে খুব বেশি কম? ক্রমে কি তার ওজন কমে যাচ্ছে?
 দিনে দিনে কি তার শক্তি কমে যাচ্ছে?
 আপনার শিশু কি স্বাভাবিকভাবে ঘুমাচ্ছে না?
 সে আগে যেমন ছিল এখন কি তেমন সক্রিয়, খেলাপ্রিয় বা প্রফুল্ল নয়?
 আপনার শিশুর কি জ্বর, ঠাণ্ডার সমস্যা, শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা পাকস্থলীর সমস্যা আছে?
অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর যদি না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে খাবার নিয়ে আপনার শিশুর মনোভাব নয় বরং তার খাবারের প্রতি আপনার মনোভাবই এজন্য দায়ী।
অধিকাংশ পুষ্টিবিদের মতে সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর খাবারের চাহিদা খুব কম আর তারা তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খেয়েই থাকে। শিশু কিন্তু তার ক্ষুধা সামাল দিতে পারে না। ক্ষুধা লাগলে শিশু খাবেই- অল্প খেতে পারে বা একটি নির্দিষ্ট খাবার খেতে পারে, তবে নিশ্চিত সে খাবেই। যদি নাও খায়, পান করবেই। সবচেয়ে বড় কথা হলে শরীরের ক্যালোরি চাহিদা রয়েছে, আর শক্ত খাবার যে সবসময় নিখুঁতভাবে কাজ করবে তাও নয়।

শিশু যদি শক্ত খাবার না খায় তাহলে শুধু ফলের রস আর দুধ থেকেই তার শরীরের জ্বালানির চাহিদা মিটতে পারে। মা হিসেবে ক্যালোরির উৎস নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন, তবে লাগাতার এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা অনর্থক, কারণ এ ব্যাপারে আপনার করার তেমন কিছু নেই। সদ্য হাঁটতে শেখা শিশু আপনার এই উদ্বেগ বোঝে না আর খাবার ব্যাপারে তার ওপর জোরাজুরি করলে সে যে আরও বিরক্ত করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
কিছু বুদ্ধি এমন পরিস্থিতি সামলাতে আপনাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারে :
 আপনার শিশু যে খাবার পছন্দ করে তাই খেতে দিন, তবে জোর করবেননা।
 খাবার সময় ৩০ মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করবে না।
 বিভিন্ন ধরনের খাবার দিন, সম্ভব হলে আঙ্গুল দিয়ে ধরে খাওয়া যায় এমন বিভিন্ন আকারের খাবার রঙিন আকর্ষণীয় প্লেটে করে খেতে দিন।
 নিয়মিত শিশুকে ফাস্ট ফুড আর ক্যান্ডি খেতে দেবেন না।
 অন্য শিশুদের এসে একসঙ্গে হাতে খাওয়া যায় এমন খাবার খেতে দিন।
এর বাইরেও আরও অনেক উপায় আছে, তবে আমি নিশ্চিত অধিকাংশ মা শিশুকে খাওয়াবার জন্য টেলিভিশন চালানো শিশুর হাতে আইপ্যাডটি ধরিয়ে দেয়ার মত উপায়গুলো ব্যবহার করে ফেলেছেন। তবে ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন বদভ্যাস যোগ করা ছাড়া সাধারণত খাবার অভ্যাস বদলাতে এর কোনও ভূমিকা নেই, দেখা যাবে একসময় সে ডিজিটাল বিনোদন ছাড়া আর খাবার মুখেও তুলছে না।
খাবার ডায়েরি রাখাও উদ্বিগ্ন মায়েদের এই ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে। শিশু কত চামচ শক্ত খাবার খেল বা কত চুমুক পানীয় পান করলে তার দৈনন্দিন হিসাব রাখুন। কতক্ষণ বুকের দুধ পান করল সেই সময়ের হিসাব রাখুন, তাতে বোঝা যাবে কতটা দুধ খেল। মধ্যরাতে পরিমাণ হিসাব করুণ আর দেখুন তার জন্য যতটা শক্তি প্রয়োজন সেই খাবার তা যোগান দিতে পার কি না।
রাসুলুল্লাহ'র (দঃ) সহীহ সুন্নাহ'র কথা মনে রাখুন, পাকস্থলীর এক তৃতীয়াংশ শক্ত খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানিতে আর বাকিটা বাতাসে দিয়ে ভরতে হবে। আপনার শিশুর পেটের আকার কতটা বড়? তাতে যে শুধু পাকস্থলী আছে তাই নয়, অন্ত্র, কিডনি আর অন্যান্য অঙ্গও থাকে। সুতরাং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর পাকস্থলীর আকার কতটা হতে পারে? সেই ছোট পাকস্থলীটির এক তৃতীয়াংশ শক্ত খাবারে ভার থাকলেই আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন