ইনকিলাব ডেস্ক : দক্ষিণ ককেশাসের বিরোধপূর্ণ নগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। টেলিভিশনের ফুটেজে সেখানে রাতভর গোলাগুলি ও কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখার পরপরই ওই আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে লড়াই থামাতে দুই পক্ষকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেইয়ার। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এ ব্যাপারে টেলিফোনে আর্মেনীয় এবং আজেরীয় পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদ্বয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, নগরনো-কারাবাখের সংঘর্ষ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এখনো একে অপরকে দোষারোপ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে। আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর প্রথমে বড় কামান এবং গ্রেনেড লাঞ্চার নিক্ষেপ করেছে আর্মেনিয়া। এদিকে, আর্মেনিয়া এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, আজারবাইজানই প্রথম ট্যাংক, কামান এবং হেলিকপ্টার দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে। নগরনো-কারাবাখ সেনাবাহিনী বলছে, আর্মেনিয়ার বিমান থেকে গোলা ছুড়ে আজারবাইজানের একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে আজারবাইজান এ তথ্য অস্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নগরনো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ১৯৯১ সালের ২০ অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। নগরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখ-ের মধ্যে হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নগরনো-কারাবাখের সংসদ আর্মেনিয়ার সঙ্গে
থাকার পক্ষে ভোট দেয়। ১৯৯৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
এর আগে খবরে বলা হয়, দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের বিতর্কিত এলাকা নগরনো-কারাবাখে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে এ লড়াই শুরু হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো সহিংসতা থামাতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে যেতে দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। নগরনো-কারাবাখ এলাকাটি ভূখ-গতভাবে আজারবাইজানের ভিতরে হলেও আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত। ১৯৯৪ সালে আজারবাইজানের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই শেষ হওয়ার পর থেকে এলাকাটি আর্মেনিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এখানে প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত শনিবার আজেরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী ওই এলাকার কিছু কৌশলগত উঁচু এলাকা ও বসতি মুক্ত করেছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, ছয়টি আর্মেনীয় ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা হয়েছে এবং একশ’রও বেশি আর্মেনীয় সেনা হতাহত হয়েছেন। লড়াইয়ে নিজেদের পক্ষের ১২ সেনাও নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। আর্মেনীয় সরকার আজেরি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হতাহতের সংখ্যা অস্বীকার করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠকে আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট সেরঝ সারকসিয়ান জানিয়েছেন, ১৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট উল্লিখিত হতাহতদের সবাই সেনা কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। একই দিন নগরনো-কারাবাখের সামরিক বাহিনী জানায়, আর্মেনীয় বিমান-বিধ্বংসী বাহিনী একটি আজেরি হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে। নিজেদের একটি এমআই-২৪ হেলিকপ্টার হারানোর কথা স্বীকার করেছে আজারবাইজান। আজারবাইজান জানিয়েছে, প্রথমে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর দূরপাল্লার কামান ও গ্রেনেড-লাঞ্চার থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। তখন পাল্টা অভিযানে তাদের বাহিনী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাহাড় ও একটি গ্রামের দখল করে নেয়। আর্মেনীয় সরকার জানিয়েছে, ট্যাঙ্ক, কামান ও হেলিকপ্টার নিয়ে আজারবাইজান ব্যাপক আক্রমণ পরিচালনা করেছে। আর্মেনীয় সমর্থিত কারাবাখের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজেরি হামলায় ১২ বছর বয়সী এক শিশু নিহত ও অপর দুই শিশু আহত হয়েছে। উভয় পক্ষই লড়াইয়ে বেসামরিক হতাহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন