ইনকিলাব ডেস্ক : পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের এক কোটি দশ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাবার পর আলোড়ন তৈরি হয়েছে। নথিগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে, পৃথিবীর নানান দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিভিন্ন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদকে গোপন করে রাখছেন। ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচার করতে, ট্যাক্স ফাঁকি দিতে এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে।
ধনিক ও ক্ষমতাবানেরা কত কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদ লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রাখে সেই কথা প্রকাশ্যে এসেছে এই ব্যাপক সংখ্যক নথি ফাঁসের ঘটনায়। গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোওস্যাক ফনসেকা, যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকেই সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে ১১ মিলিয়ন নথিপত্র। এই নথিগুলোই প্রমাণ দিচ্ছে যে মোওস্যাক ফনসেকা তার মক্কেলদেরকে অর্থ পাচার ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শ দিয়েছে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি বলছে গত ৪০ বছর ধরে কোনো প্রকারের কোনো সমস্যা বা সংকট বা নিন্দা ছাড়াই তারা এটি পরিচালনা করে আসছেন।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজে-এর ডিরেক্টর, জেরার্ড রাইল বলেছেন, গত ৪০ বছর ধরে মোওস্যাক ফনসেকা তার দৈনন্দিন যে সকল কাজকর্ম করেছে সেগুলোর নথি রয়েছে এই ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলোয়। ফাঁস হওয়া গোপনীয় এই নথি-পত্রগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর নানান দেশের মোট ৭২ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান তাদের নিজেদের দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। এরমধ্যে রয়েছেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফী এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। এছাড়া এক ব্যাংকের মাধ্যমে অন্তত প্রায় বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও রয়েছেন। বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, পানামার এই মোস্যাক ফনসেকা তাদের অন্যতম। এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে। মোস্যাক ফনসেকা অবশ্য বলছে, গত চার দশকে কোনো ফৌজদারি মামলার মুখে তাদের পড়তে হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, এসব নথির যে গুরুত্ব, তাতে আমার মনে হয়, এটাই হবে বিশ্বে গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
বার্তাসংস্থা বিবিসির খবরে বলা হয়, গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কিভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে। এর মক্কেলদের মধ্যে ৭২ জনের নাম এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যারা কোনো না কোনো দেশের সাবেক বা বর্তমান সরকার প্রধান। নিজেদেও দেশে লুটপাট চালিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন, এমন কিছু স্বৈরশাসকের নামও তালিকায় রয়েছে।
বর্তমান সউদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ছাড়াও মোস্যাক ফনসেকার সেই মক্কেলদের মধ্যে রয়েছেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফী, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল সুলতান আল নাহিয়ান, কাতারের সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আয়াদ আলাউয়ি প্রমুখ।
এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় একটি রুশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও এতে জড়িত বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্মতি ব্যতীত এতো বড় কাজ তার ঘনিষ্ঠ লোক করতে পারেন না।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, গত ৪০ বছরে মোস্যাক ফনসেকার দৈনন্দিন কর্মকা-ের দলিল এসব নথি। এসব নথির যে গুরুত্ব, তাতে আমার মনে হয়, এটাই হবে বিশ্বে গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। পানামার এসব নথি আলোচিত উইকিলিকস ও মার্কিন হুইসেল ব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁসকৃত নথির তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশি।
এই নথিগুলো অজ্ঞাত সূত্র থেকে একটি জার্মান পত্রিকার হস্তগত হয় এবং তারা তদন্তমূলক সাংবাদিকতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামে এটি প্রকাশ করে। তবে নথিগুলোর সংগ্রাহক ও প্রকাশকারীর নাম এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন