বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মার্কিন সেনাবাহিনী রোবট সৈন্য মোতায়েনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্লুমবার্গ : রোমানদের বর্শা নিক্ষেপ থেকে জঙ্গি বিমানের পাইলটদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া পর্যন্ত মানুষ একে অন্যকে হতার জন্য যে সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সে সবের উন্নয়নের জন্য সর্বদাই চেষ্টা চালিয়েছে। সামরিক বাহিনী প্রতিটি অস্ত্রই আগের চেয়ে আরো প্রাণঘাতি করার পথ সন্ধান করেছে, আর তা করতে গিয়ে নিজেদের সৈন্যদের অধিকতর নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবেছে। তবে যুদ্ধের ভবিষ্যত বিবর্তনে মার্কিন সেনাবাহিনী এমন এক পন্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারেই আর সৈন্যদের প্রয়োজন হবে না।
যোদ্ধা সৈনিক তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের রোবট তৈরির জন্য পেন্টাগন আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১শ’কোটি ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে। স্কাউটিং ও বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা ছাড়াও এসব নতুন যন্ত্র ক্ষতিকর রাসায়নিক বা গ্যাসের গন্ধ পাবে , জটিল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে এমনকি একজন সৈন্যের অস্ত্রশস্ত্রও বহন করতে পারবে।
সেনা প্রতিরক্ষা বিষয়ক সেনাবাহিনীর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রায়ান ম্যাকভেই বলেন, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে ্আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রত্যেকটি ফরমেশনেই রোবট থাকবে। তিনি জানান, গত ১৮ মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৮শ’ রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা এখন আসলে নির্মাণ ও মোতায়েন করার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনীর সাথে রোবট কাজ করবে, এ এক উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়।
তবে এ শুধু শুরু : পেন্টাগন তার রোবট মঞ্চকে তিন ভাগে ভাগ করেছেঃ হাল্কা, মাঝারি ও ভারি। এপ্রিলে সেনাবাহিনী ২৫ পাউন্ডের চেয়ে কম ওজনের ছোট রোবট তৈরির জন্য মাসাচুসেটসের দু’টি কোম্পানি চেমসফোর্ডের এন্ডেভার রোবোটিকস ও ওয়ালথাম ভিত্তিক কিনেটিকিউ নর্থ আমেরিকার সাথে ৪২ কোটি ৯১ লাখ ডলারের দু’টি চুক্তি করেছে। এ বসন্তে এন্ডেভার ছোট ও মাঝারি সাইজের রোবট নির্মাণের জন্য মেরিন কোরের কাছ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের দু’টি কাজ পেয়েছে।
অক্টোবরে সেনাবাহিনী মনুষ্য বহনযোগ্য রোবটিক ব্যবস্থা (এমটিআরএস) ইনক্রিমেন্ট ২ নামে ১৬৫ পাউন্ডের কম ওজনের একশ্রেণির ১২শ’রও বেশি রোবট নির্মাণের জন্য এন্ডেভারের সাথে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে। বিস্ফোরকসহ রাসায়নিক, বায়োলজিক্যাল, তেজস্ক্রিয় ও পারমাণবিক হুমকি সনাক্তকরণে সক্ষম এমটিআরএস -এর রোবট ২০১৯ সালের গ্রীষ্ম নাগাদ সেনাবাহিনীতে চালু করা হবে। সেনাবাহিনী এ বছরের পরের দিকে আরো বড় ও ভারি ওজনের রোবট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
এন্ডেভারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)সিন বিলাট বলেন, স্থল রোবট অনেক কিছু করতে পারে, এবং তাদের আরো ব্যাপক সক্ষমতার দিক উদ্ভাবন করা যেতে পারে। বিশেষকরে তিনি নীরস, নোংরা ও বিপজ্জনক কাজে রোবট ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন যা শুধু রোবট ব্যবহারের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধাভিযানে প্রতিরক্ষা দফতর ৭ হাজারের মত রোবটের সমাবেশ ঘটায়। এগুলো অধিকাংশই উন্নয়নকৃত বিস্ফোরক ডিভাইস (আইডি) নিষ্ক্রিয় করায় ব্যবহৃত হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ সৈন্য হত্যার সমস্যা দ্রæত সমাধানের চেষ্টা করছিল। তবে তা করতে গিয়ে তারা যেসব সরঞ্জাম ব্যবহারের কৌশল উদ্ভাবন করে তাকে ডিফেন্স নিউজ জার্নাল গত বছর তাকে বিভিন্ন ধরনের স্থল রোবটের পোষা প্রাণির চিডিয়াখানা নামে আখ্যায়িত করে।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ম্যাকভেই বলেন, এ পন্থার অর্থ হচ্ছে একটি কাজের জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করা। সেনাবাহিনীর বর্তমান পদক্ষেপ হচ্ছে অভিন্ন চেসিসের আন্তঃপরিচালন যোগ্য রোবট মোতায়েন করা যাতে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ও পে লোড যুক্ত থাকবে।উল্লেখ্য, নতুন রোবট ব্যবহারের পাশাপাশি সেনাবাহিনী তাদের পুরনো মাঝারি ও ছোট রোবটও বহাল রাখবে।
বহু সক্ষমতা থাকলেও মার্কিন পদাতিক বাহিনীর বর্তমান বা পরিকল্পিত কোনো রোবটই এখন অস্ত্র সজ্জিত নয়। সশস্ত্র রোবট এখনো একেবারেই নতুন। তবে দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার সম্মুখস্থ অসামরিকীকৃত অঞ্চলে মোতায়েনকৃত সেন্ট্রি গান-বোট ও বিভিন্ন দেশের উড়ন্ত ড্রোন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত।
এন্ডভার রোবটিকসের সিইও বিলাট বলেন, কোনো রোবট প্রচলিত অস্ত্র সজ্জিত করা স্থল সৈনাদের জন্য খুব বেশি ফল বয়ে আনবে না। মাঝেমধ্যে রোবটকে অস্ত্র সজ্জিত করার আগ্রহ দেখা যায়, তবে সে ইচ্ছা খুব বলিষ্ঠ নয়।
এখন যে সব নতুন ধরনের রোবট তৈরি হবে তা অস্ত্র সজ্জিত হবে এবং তা মানুষের চেয়ে দ্রæত ও ব্যাপক ভাবে যুদ্ধক্ষেত্র দেখা ও মূল্যায়ন করতে এবং অনেক বেশি দ্রæত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবে। সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির প্রযুক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক এবং সিনিয়র ফেলো পল শারে বলেন, প্রযুক্তি আমাদের অনিবার্য ভাবে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে দেশগুলো প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যন্ত্রের উপর ছেড়ে দেবে কিনা এ প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।
গত বছর টেসলা ইনক. ও স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা বিলিওনয়ার এলন মাস্কসহ রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ১১৬ জন প্রতিষ্ঠাতা প্রাণঘাতি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন জানিয়ে জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, একবার এ ধরনের অস্ত্র তৈরি হলে যুদ্ধ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। চিঠিতে হুঁশিয়ারি ্উচ্চারণ করা হয় যে এ পদ্ধতি হচ্ছে প্যান্ডোরার বাক্স খোলা।
‘ঘাতক রোবট বন্ধ কর’ আন্দোলনের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকার ১৪টি দেশসহ ২৬টি দেশ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহবানে সাড়া দিয়েছে। যে সব দেশ এ তালিকায় অনুপস্থিত তারা সে সব দেশ যাদের রয়েছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শিল্প এবং তারা এআই ও রোবটিক্স নিয়ে গবেষণা করছে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরাইল, ফ্রান্স , জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্য।
যুদ্ধক্ষেত্রে কে বাঁচবে আর কে মারা যাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকারর কর্মীরা ৫ বছর আগে এ আন্দোলন শরু করেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আর্মস ডিভিশনের পরিচালক ও এ আন্দোলনের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ গুজ বলেন, আপনি যদি এ মতে বিশ^াসী হন যে আপনার এমন মেশিন আছে যা রণক্ষেত্রে জীবন ও মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিধারণ করবে তাহলে এটা খুব সহজ বিষয়।
বেশিদিন আগের কথা নয়। এ ধরনের ভবিষ্যত ভিত্তিক সফটওয়্যার একেবারে অসম্ভব না হলেও অন্যূন ৩০ বছর দূরে বলে মনে করা হত। কিন্তু যে ভাবে গবেষণা চলছে তাতে এ সময় হ্রাস পেয়েছে।
জেনেভায় একটি জাতিসংঘ গ্রæপ প্রাণঘাতি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা বিষয়ে ৫ম বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে। জেনেভা থেকে গত মাসে দেয়া এক সাক্ষাতকারে গুজ বলেন, প্রতি বছরই এ সময় কমে আসছে। এখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা কয়েক দশক নয়, কয়েক বছর দূরে।
গুজ বলেন, এক সময় এ আন্দোলন এ সব সরকারকে বোঝাতে পারবে যে কোনো দেশেরই যদি এ ধরনের অস্ত্র না থাকে তাহলে প্রতিটি দেশই ভালো থাকবে। কিন্তু শারে বলেন, স্বংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি করতে রাজি তবে এমন সুযোগ নেই। তবে জাতিসংঘের বাইরে কিছু দেশ এ ধরনের নিষেধ মূলক চুক্তি স্বাক্ষর সমর্থন করতে পারে।
সাবেক আমি রেঞ্জার শারে বলেন, প্রবক্তারা হয়ত যুক্তি দিতে পারেন যে রোবট সৈন্যরা সৈন্যদের ক্ষতি থেকে রক্ষায় ঢাল হবে, তারা সশস্ত্র যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী পরিণতিরও অবসান করতে পারে যা হবে যুদ্ধের বিভীষিকায় উল্লেখযোগ্য রকম এক বিষয়।
তিনি বলেন, যুদ্ধে মানুষের প্রাণহানির পরিণতি যদি কেউ মূল্যায়নে সক্ষম হয় তার একটা মূল্য আছে। এ মূল্রায়ন করা না হলে এ বিশ^ আরো ক্ষতিকর হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
ইসমাইল ২৩ মে, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
খুব ভালো
Total Reply(0)
বাবুল ২৩ মে, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
আর আমরা এখনও কোথায় পরে আছি
Total Reply(0)
নজরুল ২৩ মে, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
সামনে আরো কত কিছু যে দেখতে হবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন