শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে স্বাস্থ্য সুবিধা বঞ্চিত দলিত নারীরা, মারা যাচ্ছে অল্প বয়সে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এক বছর আগের ঘটনা। ৪০-বছর বয়সী এক দলিত বা নিম্নবর্ণের মহিলা প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পুরো সময় ডাক্তার তাকে একবারও স্পর্শ করতে ডাক্তার অস্বীকার করেন। কিন্তু ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের ভুপালের সমাজ কর্মী ভারতী শঙ্কর ওই ঘটনা কাউকে সহজে ভুলে যেতে দেননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় দলিত নারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় টিকে থাকা বর্ণবৈষম্যের শিকার এসব নারী। আলাপ করে ভারতী জানতে পারলেন সব দলিত নারীর সঙ্গেই একই আচরণ করে ওই ডাক্তার। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর ডাক্তার তার কাজের পদ্ধতি বদলাতে বাধ্য হন।
অচ্ছুত অনুশীলন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এভাবে হিন্দু সমাজ কাঠামোতে নিম্নজাতের গ্রæপগুলোকে সমাজচ্যুত ও আলাদা করে রাখা হয়েছে।
ভারতে দলিত নারীদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা বৈষম্য একটি সাধারণ ঘটনা। সর্বশেষ জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপে (এনএফএইচএস) দেখা গেছে, ৭০.৪% দলিত নারী স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশ সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। ভারতী বলেন: ‘আমাকে এআইআইএমএস ও জহরলাল ক্যান্সর হাসপাতালেও খারাপ আচরণের সম্মুখিন হতে হয়েছে।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এনএফএইচএস রিপোর্টে দেখা যায়, দলিত নারীদের গড় আয়ু ৩৯.৫ বছর। অথচ উচ্চবর্ণের নারীদের গড় আয়ু ৫৪.১ বছর।
অল ইন্ডিয়া দলিত মহিলা অধিকার মঞ্চের কর্মী গায়ত্রি শঙ্কর বলেন: ‘স্বাস্থ্যসেবার প্রতিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন দলিত নারীরা। আমি দেখেছি সন্তানসম্ভাবা দলিত নারীর সঙ্গে ধাত্রীরা পর্যন্ত খারাপ আচরণ করছে। এদের ব্যথার ব্যাপারে ধাত্রীদের কোন সহানুভুতি নেই।’
স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশ
স্বাস্থ্য সেবার মৌলিক সম্পদে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে বর্ণবৈষম্য। গায়ত্রি বলেন, ‘আমাদের জন্য একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন। কেরালায় রানি নামে এক দলিত নারী একাকী ঘরের মধ্যে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তার স্বামী হন্যে হয়ে চেষ্টা করেও হাসপাতাল থেকে কোন এ্যাম্বুলেন্স আনাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের গাড়িতে করে মা ও সন্তানকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পারিবারিক জরিপে দেখা যায়, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী চারজন দলিত নারীর একজন গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছেন। উচ্চবর্ণে এই হার ছয়জনে একজন। রিপোর্টে দেখানো হয় প্রতিটি স্বাস্থ্যসূচকে দলিত নারীরা পিছিয়ে আছেন, তারা অল্প বয়সেই মারা যাচ্ছেন। ভারতে দলিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ঐতিহাসিক কাল থেকেই বৈষম্য চলছে। ২০১৫ সালে ল্যাঞ্চেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ‘স্বাস্থ্য ও ভারতের জাত ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক রিপোর্টে তিনটি কারণ দেখানো হয় যেখানে বর্ণ ব্যবস্থা স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে: জেনেটিকস, আর্লি এনভাইরনমেন্ট ও সুযোগ।
সামাজিক সচলতা ও দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থাও দলিত নারীদের স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। প্রয়োজন হলে ৭০.৪% দলিত নারী স্বাস্থ্য সেবা পান না বলে অভিযোগ করেছেন।
দলিত ও নারী হওয়ার কষ্ট
২০১৭ সালে মধ্যপ্রদেশে ১৮ বছর বয়সী এক দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। তার ডাক্তারি পরীক্ষা চলাকালে ডাক্তার তাকে বলে: ‘ওরা যদি তোমার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি করতো তাহলে তোমার শরীরে দাগ থাকতো। কিন্তু তেমন কোন দাগ দেখা যায় না। এর মানে হলো তুমি নিজের ইচ্ছায় এ কাজ করেছো।’
ডাক্তার ও নার্সদের এ ধরনের আচরণ দলিত নারীদের আরো অসহায় করে তোলে বলে ভারতী মনে করেন। তিনি বলেন: ‘দুবছর আগে এক গুরুতর অপারেশনের জন্য আমি এআইআইএমএ-এ ভর্তি হয়েছিলাম। আমার পেটে বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছিলো। ডাক্তাররা সুঁচ বের করে নিতে ভুলে যায়। যার জন্য দ্বিতীয়বার আমার অপারেশন করতে হয়েছিলো।’
কুমারি দলিত মেয়েদের অবস্থা আরো করুন। কারণ কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তাদেরকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দেয় না, বলে না কি ধরনের চিকিৎসা তাদের নিতে হবে।
‘দলিত উইমেন ইন ইন্ডিয়া: এ্যাট দ্য ক্রসরোড অফ জেন্ডার, ক্লাস এন্ড কাস্ট’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে লেখক নিধি সাধনা সাভারওয়াল ও ওয়ানদানা সোনালকর দেখান, মানব উন্নয়ন সূচকের প্রতিটি ক্ষেত্রে, শিক্ষা থেকে শুরু করে আয়ু পর্যন্ত, দলিত নারীরা দলিত পুরুষ ও অন্য নারীদের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন