সতের দিন জলমগ্ন গুহায় আটকে থাকার পর উদ্ধার হওয়া থাই কিশোররা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের একজনের বাবা বলেছেন, গুহায় কিশোরদের ঘণ্টাখানেক থাকার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় তাদের দুই সপ্তাহের বেশি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সেখানে থাকতে হয়েছে।-খবর রয়টার্স ও বিবিসি বাংলার।
ওয়াইল্ড বোয়ারস ফুটবল দলের ক্যাপ্টেনের বাবা ব্যানপোট কোর্নক্যাম বলেন, তার ১৩ বছর বয়সী ছেলে তাকে জানিয়েছিল, প্রশিক্ষণ শেষ করেই তারা গুহার ভেতরে খেলতে যাবে। তারা ধরে নিয়েছিল, সেখানে তারা এক ঘণ্টা থাকবে।
কিন্তু যখন তারা গুহার ভেতরে চলে যায়, তখনই বৃষ্টি শুরু হয়। ভেতরে পানির স্রোত বইতে শুরু করে। তখন সবাই আটকে পড়ে।
এদিকে তাদের প্রধান কোচ নোপারাত কানতাওং বলেছেন, তাদের একটি ফুটবল ম্যাচ ছিল। সেটি বাতিল করে তিনি সেদিন প্রশিক্ষণের জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন।
তিনি তাদের গুহায় যাওয়ার জন্য কোনো পরামর্শ দেননি। ফলে তাদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না। তবে শনিবার কিশোর ফুটবলারদের একজনের জন্মদিন ছিল।
জন্মদিন পালনের জন্য সেদিন স্থানীয় একটি দোকান থেকে এই কিশোররা সাতশ থাই বাথ দিয়ে খাবার কিনেছিল বলে ওই দোকানদার জানিয়েছেন।
প্রধান কোচ নোপারাত কানতাওং বলেছেন, সহকারি কোচ একাপল এই কিশোর ফুটবলারদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের জন্য সে সবকিছু করতে পারে।
তিনি ধারণা করছেন, কিশোর ফুটবলাররা সহকারি কোচের কাছে আবদার করে তাকে নিয়ে গুহায় গিয়েছিল। স্থানীয় সবার কাছে গুহাটি পরিচিত এবং কিশোররাও আগে ওই গুহায় গিয়েছিল।
তারা যে গুহার গভীরে চলে গিয়েছিল সে ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছে, তারা যখন গুহায় গেছে, তখন সেটি শুকনো ছিল।
কিন্তু হঠাৎ অতিবর্ষণে গুহায় পানি বাড়তে থাকায় তারা গভীরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
কিশোররা এখনও অনেক দুর্বল। আর এমন দুর্বল শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সে কারণে তারা এ মুহূর্তে সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
থাইল্যান্ডে তাদের জীবন এখন অনেক মূল্যবান। তাদের কোনো ক্ষতি হোক, সেই সুযোগ দিতে রাজি নয় থাই কর্তৃপক্ষ।
সেজন্য পিতা মাতাদের কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে দেখানো হয়েছে।
এই কিশোরদের বেশিরভাগের পিতা মাতা প্রান্তিক এলাকার এবং দরিদ্র। তাদের সন্তানদের যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে তারা বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
ফলে আপাতত সন্তানের কাছে যেতে না দেয়ার জন্য পিতা মাতারা প্রতিবাদ করবেন না।
একাপলের বিরুদ্ধে কী শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে?
যেহেতু এই কোচ কিশোরদের সঙ্গে গুহায় গিয়েছিলেন, সেখানে ঘটনার দায় তার ওপরই আসতে পারে।
কিন্তু কিশোরদের মাতা পিতারা বলেছেন, তারা তাকে মাফ করে দিয়েছেন। কারণ গুহায় আটকা থাকাবস্থায় এই সহকারি কোচই কিশোরদের উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন।
এছাড়া সহকারি কোচ অতীতে ১২ বছর ভিক্ষু হিসেবে ছিলেন। ফলে তিনি মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে কিশোরদের ধকল সামাল দেয়ার মতো পরিস্থিতিতে রাখতে পেরেছিলেন।
গুহায় আটকা পড়ার পর তাদের কাছে যেটুকু খাবার ছিল, তা তিনি নিজে না খেয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি খেলে কিশোরদের খাবার কমে যেতে পারে, এই চিন্তা তার মধ্য ছিল।
এমন অনেক কথা সামাজিক নেটওয়ার্কে ছড়িয়েছে। তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে থাই জনগণের মাঝে। তাছাড়া থাই জনগণের মাঝে দোষারোপের সংস্কৃতি নেই।
তাদের সঙ্গে ছিল কমদামি টর্চ লাইট। যেটি অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাদের খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ নয়দিন তারা অন্ধকারে ছিল।
এরপর থাই সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক এবং তিনজন ডুবুরি যখন তাদের খুঁজে পেলেন, তখন তাদের কাছে আলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
অনেকদিন অন্ধকার গুহায় থাকার পর আলো জ্বালানোর কারণে চোখ বাঁচাতে তাদের তখন সানগ্লাস পড়তে হয়।
অভিযানের পিছনে খরচের বড় অংশ দিয়েছে থাই সরকার। অনেক দেশ এতে জড়িত ছিল, সেই দেশগুলোও তাদের নিজেদের সহযোগিতা দলের খরচ বহন করেছে।
যেমন মার্কিন বিমান বাহিনীর ৩০ জন সদস্য এসেছিল সাহায্যের জন্য। সেই অর্থ মার্কিন সরকার দিয়েছে।
থাই ব্যবসায়ীরা অনেকে পরিবহন এবং খাবার দিয়ে সাহায্য করেছে। আন্তর্জাতিক ডুবুরিদের আনার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্স বিনামূল্যে টিকেট দিয়েছে। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষও নানাভাবে সাহায্য করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন