পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো দেশের নাগরিকদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল গণতান্ত্রিক দল কর্তৃক গণতন্ত্রের এক নতুন সনদ (সিওডি) স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ থেকে লালামুসার উদ্দেশে যাত্রার আগে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। বিলাওয়াল বলেন, গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে বিরাট আকারে আলোচনা হওয়ার মতো কোনো ইস্যু আমার নেই। শুধু পিপিপি এবং পিএমএল-এনের মধ্যে নতুন একটি গণতন্ত্রের সনদ গড়ে তোলাই প্রয়োজন নয়,এটা সবার জন্য প্রয়োজন।
এর আগে ২০০৬ সালের মে মাসে লন্ডনে এমন সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন বিলাওয়ালের মা ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরীফ। এ প্রসঙ্গে বিলাওয়াল বলেন, ওই সনদের কোনো ইতিবাচক বা ভাল কোনো সুবিধা এখন পর্যন্ত তার দল নেয় নি। নওয়াজ শরীফ ও শাহবাজ শরীফ উভয়ের সাথে গণতন্ত্রের সনদ ইস্যুটি বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক নয়। বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরীফ যে সনদ স্বাক্ষর করেছিলেন তাতে ছিল ৩৬টি দফা। এতে উভয় দল একে অন্যের পাশে ভবিষ্যতে দাঁড়ানোর কথা ছিল। তা ছাড়া তারা বেশ কিছু বিষয়ে সাংবিধানিক সংশোধনের বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ ও জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরোর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে উন্নত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারণায় বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে পিপিপি। এর পর থেকে স্বাক্ষরিত গণতন্ত্রের সনদ লঙ্ঘনের জন্য উভয় দল একে অন্যকে অভিযুক্ত করা শুরু করে। দু’দলই জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরোকে বাতিল করতে একমত হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতার মেয়াদে তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিলাওয়াল বলেন, গণতন্ত্রের সনদের মধ্যকার নীতি, ১৮তম সংশোধনী ও গণতন্ত্রের মধ্যে বিষয়ে সকল দলের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন। তাদের সকলের ঐকমত্য প্রয়োজন যে তারা মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা , রাজনৈতিক সংগঠনের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে আপস করবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মহাজোট (জিডিএ) তার দলের জন্য রাজনৈতিক হুমকি নয়। তিনি বলেন. তার দল সারাদেশের জনগণের কাছ থেকে ভালো সমর্থন পাচ্ছে। তিনি বলেন, এটা তার প্রথম নির্বাচন, কিন্তু তিনি জানেন যে তার সামনে দীর্ঘ অভিযাতা রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশকে বর্তমান সংকট থেকে মুক্ত করতে তিনি এক রাজনৈতিক মিশন নিয়ে দেশে এসেছেন। তিনি রাজনীতিতে নোংরা ভাষা ব্যবহারের নিন্দা করেন।
ইমরান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
পিটিআই নেতা ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, সিন্ধুতে জিডিএ-র সাথে পিটিআইর জোটের কথা উল্লেখ করে বলেন, খান সাহাব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ভুল ধারণা করছেন। তিনি সম্ভবত তার এই ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হবেন। তিনি প্রশ্ন করেন , ইমরান খান অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পাচ্ছেন কেন?
শাহবাজ হবেন প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এর মধ্যে বিভাজন তৈরি হওয়ার খবর নাকচ করে দিয়েছেন দলটির নেতা ও সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি। তিনি বলেন, দলটি নির্বাচনে জয়লাভ করলে শাহবাজ শরিফই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন। তবে দলীয় সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমানে তিনি দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা নওয়াজের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ। তবে এরই মধ্যে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কোন্দল তৈরি হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মঙ্গলবার ডনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আব্বাসি বলেন, দল জয়ী হলে শাহবাজ শরিফই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন। দলের নেতারা সংবিধান মোতাবেক কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা চৌধুরী নিসারকে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আব্বাসি দাবি করেন, তিনি (নিসার) দলীয় টিকিটের জন্য আবেদন করেননি।
নির্বাচনের পর জোট সরকার গঠন নিয়ে ডনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে আব্বাসি বলেন, ‘২০০৮ সালে পিপিপির সঙ্গে করা জোট এক মাসও টেকেনি। এমন কোনও সম্ভাবনা তৈরি হলে তা নিয়ে নির্বাচনের পরে আলোচনা করা হবে।
প্রচারণায় মরিয়ম পুত্র
পিএমএল-এন মরিয়ম নওয়াজের ছেলে জুনায়েদ সফদারকে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কথা বিবেচনা করছে। জুনায়েদ সফদার যুক্তরাজ্যের এক বিশ^বিদ্যালয়ের রাজনীতির ছাত্র। সোমবার সকালে তিনি পাকিস্তানে ফিরেছেন। দলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, তিনি কারাগারে নওয়াজ শরীফ, তার পিতা মোহম্মদ সফদার ও মা মরিয়ম নওয়াজের সাথে সাক্ষাত করবেন। পরে তিনি বিশেষ কিছু নির্বাচনী এলাকায় সভায় বক্তৃতা করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন