সমকামিতাকে বৈধতা দিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশটির সামরিক নেতাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এই রায় ভারতীয় সেনাদের উপর কি প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এই দুশ্চিন্তা।
কিছুটা বিভ্রান্তি থাকলেও এই রায় ভারতীয়ে সেনা সদস্যদের উপর প্রযুক্ত হবে কিনা এবং যদি হয় তাহলে সৈন্যদের উপর কি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সেনা আইন বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারছেন না। সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখা নিয়ন্ত্রণকারী আইনে সমকামিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গত সপ্তাহে দিল্লির মানেকশ সেন্টারে সকল কর্ণেল ও তাদের স্ত্রীদের ডেকেছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তিনি সেখানে বলেন যে, ‘নৈতিক স্খলন’ ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় এই ‘নৈতিক স্খলন’র সংজ্ঞাটি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। ১৯৫০ সালের সেনা আইনের ৪৫ ধারায় বিস্তারিত বিবরণ ছাড়াই ‘অপ্রত্যাশিত আচরণের’ কথা বলা হয়েছে। ধারা ৪৬(ক)-তে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি লজ্জাজনক আচরণ যেমন: নিষ্ঠুরতা, অশ্লিল বা অস্বাভাবিক কোন কাজ করার কারণে কোর্ট মার্শালে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া যাবে।
১৯৫০ সালের বিমান বাহিনী আইনের ৪৫ ও ৪৬(ক) ধারাতেও একই কথা বলা হয়েছে। ১৯৫৭ সালের নৌবাহিনীর আইনে অশ্লিল কাজের জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় তিন সেনা আইনের উপর কি প্রভাব ফেলে তা খোঁজ করার আগে তাদেরকে রায়টি ভালোভাবে পড়তে হবে। কিন্তু অনেক আইনজীবী আশা করছেন যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। চন্ডিগড়ের আইনজীবী মেজর নবদীপ সিং বলেন, এই যুগান্তকারী রায় ‘সামরিক আইনকে কিছুটা মানবিকীকরণ’ করবে। সিং সশস্ত্রবাহিনীসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপিত হলে সেনা আইনের ধারা ৬৯ বা আইপিসি’র ধারা ৩৭৭ অনুযায়ী সামরিক আইনে কোন সৈন্যের বিচার করা যাবে না। সেনা আইনের ৬৯ ধারাটি ‘দেওয়ানি অপরাধের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
তিনি আরো বলেন, ‘আইনের ৪৬ ধারায় যে ‘অস্বাভাবিক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। ঠিক একই শব্দ ৩৭৭ ধারাতেও ব্যবহার করা হয়েছে।’
তবে, নিষ্ঠুরতা বা অশোভন ধরনের অন্য যেকোন ধরনের লজ্জাজনক আচরণ ৪৬ ধারা অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে থাকবে।
দুশ্চিন্তা কেন : এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায় এই ধারার সঙ্গে কীভাবে মেলানো যায় তা এখন দেখতে হবে। কর্মকর্তারদের মধ্যে মূল উদ্বেগের বিষয় হলো, সমকামিতা শুরু হলে তা অপারেশনাল ইস্যুগুলোর উপর প্রভাব ফেলবে।
মাসের পর মাস সেনা সদস্যরা পরিবার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। মানসিক সঙ্গী হিসেব তাদেরকে ‘বাডি’ দেয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের পোস্টিংয়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর সত্যিকারের কোন উপায় নেই।
তবে একজন সেনা আইনজীবীর মতে অফিসারদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই রায় সেনাবাহিনীতে সমকামিতাকে বৈধ করবে না। সেনা আইনের ৪৬(খ) ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীতে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে থাকবে।
ওই আইনজীবী আরো জানান যে অভিযুক্তকে ৬৩ ধারাতেও (আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ) বিচার করা যাবে, তবে আইনের ৬৯ ধারাতে বিচার করা যাবে না। তিনি সংবিধানের ৩৩ ধারা উল্লেখ করে বলেন যে, এতে সেনাবাহিনীর অধিকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পার্লামেন্টকে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীতে সমকামিতা নিষিদ্ধ করে পার্লামেন্টে সুনির্দিষ্ট সংশোধনী বা অর্ডন্যান্স পাস করতে হবে।
সারা দুনিয়ায় সেনাবাহিনীতে সমকামিতাকে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখা হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন সেনা সদস্যদের জন্য সমকামিতাকে স্বাগত জানিয়ে ওই স্থিতাবস্থায় পরিবর্তন আনে। ১০০টির বেশি সেনাবাহিনীর উপর জরিপ চালিয়ে থিংকট্যাংক-হগ সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ দেখতে পায় যে, ভারত হলো সমকামীদের প্রতি সবচেয়ে কম বন্ধুত্বপূর্ণ একটি দেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন