বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আলেপ্পোয় সংঘর্ষ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের বিশেষ দূত সিরিয়ার ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সিরিয়ার আলেপ্পোর কাছে রাশিয়া আবারো কামান স্থাপন করেছে। এতে পুতিনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে ওয়াশিংটন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দ্বিতীয় নগরী আলেপ্পোয় সহিংসতা তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে অস্ত্রবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। 

জেনেভায় সাংবাদিকদের জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টেফান ডি মিসতুরা বলেন, অস্ত্রবিরতি এখনও কার্যকর রয়েছে। কিন্তু আমরা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এটি বড়ো ধরনের সমস্যায় পড়বে। লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে সর্তক করে বলেন, প্রায় ভেঙে পড়া অস্ত্রবিরতি এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এদিকে সিরিয়ার বাশার সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্যে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন ওবামা। তবে তিনি অস্ত্রবিরতি জোরদার ও শান্তি আলোচনা সমর্থনের জন্যে রাশিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। ওবামা বলেন, সোমবার তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে আরো চাপে রাখতে এবং জেনেভায় চলমান শান্তি আলোচনায় বিরোধীদের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার চেষ্টা নিয়ে আলাপ করেন। ওবামা বলেন, অস্ত্রবিরতি ভেঙে গেলেও আমরা একযোগে এটিকে আবারও কার্যকর করার চেষ্টা করবো। তবে আইএসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশটির হোমসে সেনাবাহিনী নিষিদ্ধঘোষিত ব্যারেল বোমা হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা সিরিয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, সিরিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। এর স্থায়িত্ব নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এছাড়া আসাদ-সমর্থক আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো তাকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পেরেছেÑ এমনটা স্বীকার করে ওবামা বলেন, আসাদ টিকে থাকলেও সামরিকভাবে তারা বিদ্রোহীদের কখনোই পরাজিত করতে পারবে না। সংকটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষকে এক টেবিলে না বসিয়ে এই সমস্যার কোনো সমাধান সম্ভব নয়। এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান ওয়াশিংটন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কি সেখানে জাতিসংঘের উদ্যোগকে সমর্থন দিয়ে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করবেন, নাকি প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য সামরিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয় আড়াল করতে শান্তি আলোচনাকে ব্যবহার করবেনÑ এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ওবামা প্রশাসন। সম্প্রতি সংঘাতময় শহর আলেপ্পোর কাছে রাশিয়া আবারো কামান স্থাপন করেছে বলে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, গত মার্চে সিরিয়া থেকে কিছু বিমান প্রত্যাহার করলেও ফের হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠিয়ে রাশিয়া সেনাশক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং বিরোধীদের ওপর নতুনভাবে বিমান হামলা শুরু করেছে। এসব পরিস্থিতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হলে তা মস্কোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভীরুতা বলেই মনে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা জানান, হয় রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখ ঢেকে রেখেছে, নয়তো তারা নিজেরাই নিজেদের চোখ ঢেকে রেখেছে। অন্যদিকে, অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই আবার সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস তাদের মধ্যে অন্যতম। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সিরিয়ায় আংশিক অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। এতে ইসলামিক স্টেট গ্রুপকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পর থেকে সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকায় নাটকীয়ভাবে সহিংসতা কমে যায়। ফলে জেনেভায় চলমান শান্তি আলোচনা নিয়ে সবার মাঝে আশার সঞ্চার হয়। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান নিয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন অনেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পরিস্থিতি উল্টো দিকে মোড় নেয়। কিছু এলাকা বিশেষ করে আলেপ্পোতে সহিংসতা তীব্র হতে শুরু করে। জরুরি কর্মীরা বলছেন, কেবলমাত্র শুক্রবারে বিদ্রোহী অধ্যুষিত আলেপ্পোর পাশে বিমান হামলায় ২৫ বেসামরিক নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে। ডি মিসতুরা বলেন, শুক্রবারের এ সহিংসতা খুবই উদ্বেগজনক। এদিকে সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহে ব্যর্থতার কারণে সিরিয়ার প্রধান বিরোধী জোট হাই নেগোশিয়েসন্স কমিটি (এইচএনসি) হতাশ হয়ে চলতি সপ্তাহে জেনেভায় চলমান শান্তি আলোচনায় যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকছে। তবে মিসতুরা বলছেন, জেনেভা হোটেলে এইচএনসি’র বাদবাকি সদস্যদের সাথে তার দলের খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন