সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যে কারণে সিঙ্গাপুরের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বসেরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:০২ পিএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

শিক্ষা ব্যবস্থার র‍্যাংকিংয়ের বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে এশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপদেশ সিঙ্গাপুর। তাদের রয়েছে সবচেয়ে প্রশংসিত স্কুল পদ্ধতি। একজন বিতর্কিত কট্টরপন্থী নেতার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে এই ভাল যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের চড়া মূল্য দিতে হয়।
পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা। সিঙ্গাপুরের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রশংসিত শিক্ষা পদ্ধতি।
প্রভাবশালী পিআইএসএ পরীক্ষা যেখানে কিনা আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, সেখানে সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা-ওইসিডি ৭৫টি দেশে এই পিআইএসএ পরীক্ষাটি পরিচালনা করে। সেখানে মূলত শিক্ষার্থীদের গণিতশাস্ত্র, বিজ্ঞান এবং অধ্যয়নের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
দেশটির এমন ভাল ফলাফলের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হল, দেশটির সরকারি আমলাদের প্রত্যেকেই বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে এসেছেন। শিক্ষা নিয়ে তাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। আর সেটা হল: সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের অন্যতম ধনী, সর্বাধিক উন্নত এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত দেশগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত করা।
সিঙ্গাপুর বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকার আরেকটি কারণ হল, তাদের শিক্ষকরা উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন। এমনটাই মনে করেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ক্লাইভ ডিমক। তাকে সিঙ্গাপুরের জাতীয় শিক্ষা ইন্সটিটিউটের একটি লিডারশীপ প্রোগ্রাম সমন্বয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধা থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় আগ্রহী হচ্ছেন।
শিক্ষা খাতের বেতন দেশটির শিল্প ও আর্থিক খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা স্নাতক শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আকৃষ্ট করে। শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন গড়ে ১৮শ ডলার থেকে তেত্রিশশ' ডলার থেকে শুরু হয়। এছাড়া অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি পারফর্মেন্সের ওপর তাদের আলাদা বোনাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সিঙ্গাপুর তাদের সরকারি বাজেটের ২০% শিক্ষাখাতে ব্যয় করে।
বিশেষজ্ঞ ডিমক জানান, "শিক্ষার উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি, পরীক্ষাগার এবং চমৎকার সব বই।"
সিঙ্গাপুর এক সময় এশিয়ার দরিদ্রতর দেশগুলোর একটি ছিল। ১৯৬৫ সালে তারা যখন মালয়েশিয়া থেকে স্বাধীন হয়। তখন কেবলমাত্র অভিজাতদের শিক্ষার সুযোগ ছিল। এ কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল নিরক্ষর। সিঙ্গাপুরের সরকারি পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এশিয়ার এক সময়কার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। সিঙ্গাপুরে তেল বা গ্যাসের মতো কোন প্রাকৃতিক সম্পদও নেই। তাই দেশটি তাদের জনসংখ্যার ওপর বিনিয়োগ করে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখ। যাদের প্রত্যেকেই জনসম্পদ।
সিঙ্গাপুরে স্বৈরাচারী সরকার থাকায় সেখানকার কিছু মৌলিক স্বাধীনতা দমন হলেও সরকারের প্রতি আনুগত্য সামাজিক নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়েছে। তাদের এই দর্শন শিক্ষা পদ্ধতি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সিঙ্গাপুর-বাসীর মধ্যে একটি অনুভূতি বা চিন্তাধারা রয়েছে যেটা কিনা সেখানকার মানুষের মানসিকতার ওপর অনেক বড় প্রভাব রাখে। এই অনুভূতিটি "কিয়াসু" নামে পরিচিত। যেটা বেশিরভাগ মানুষ পাশ কাটিয়ে যায়।
সাবেক শিক্ষক ডন ফুং জানান, “কিয়াসু নামের এই উদ্বেগ শিশুদের ওপর কঠিন প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যাদের পরিবার এই ভয়ে থাকে যে তাদের সন্তান ভাল ফল অর্জন করতে ব্যর্থ হবে।”
সেরা স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর জন্য, সিঙ্গাপুরের শিশুরা অনেক আগে থেকেই তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যেটা প্রাইমারি স্কুল লিভিং এক্সামিনেশন বা পিএসএলই নামে পরিচিত। এই পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করে যে তারা কোন ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়বে। এবং এই প্রস্তুতি তাদের দুই বছর বয়স থেকেই শুরু হয় বলে জানান ফুং।
শিক্ষার্থীদের জন্য পিএসএলই পরীক্ষা কতোটা কঠিন সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানকার প্রাইভেট টিউশন শিল্প দেখে। আসলে শিক্ষা, সিঙ্গাপুরের একটি লাভজনক শিল্প। স্থানীয় পত্রিকা স্ট্রেইট টাইমসের মতে যার মূল্যমান প্রায় ৭৫ কোটি ডলার।
তবে, পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক উদ্বেগে ভোগে। এসব মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত তরুণদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এবং এটি তরুণদের আত্মহত্যার হার বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা সিঙ্গাপুরের ১০ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে জরিপে উঠে এসেছে।
চলতি বছরের শুরুতে, সরকার স্বীকার করেছে যে এই শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে।
এ ব্যাপারে দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী ওং ইয়ে কুং বলেন, “আমরা নিশ্চয়তা দেব যে এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রতি কঠোর হতে নয় বরং তাদের সহায়তা দিতে তৈরি করা হয়েছে।”
সরকার ‘থিংকিং স্কুলস, লার্নিং নেশন’ নামে একটি নীতি প্রণয়ন করেছে। যেটি মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে শেখার প্রক্রিয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে। এই নীতির মূলমন্ত্র ‘পড়াও কম, শেখাও বেশি।’ সূত্র: বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mizu ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:২৭ এএম says : 0
A sorkarer sobi kintu bissobasir rul model. Kotae agortola ar kotae koltola.siggapur good luck.এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
Total Reply(1)
shaukaut ৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৯ এএম says : 4
je vhabe bangladeshe shikkha bebosthar poriborton jocche jodi ei shorkar thake tobe jati er shufol pabe thanks fro venezuela.

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন