ইনকিলাব ডেস্ক : সউদি আরবের মন্ত্রিসভা চলমান অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে একটি দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনায় একমত হয়েছে। সউদি নিউজ চ্যানেল আল-আরাবিয়াকে ভিশন-২০৩০ সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মন্তব্য করেন, ২০২০ সালের মধ্যে তার দেশের তেলের ওপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটবে। এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ঘোষণা করতে গিয়ে ডেপুটি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মন্তব্য করেন তার দেশ তেল সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ভিশন ২০৩০ নামে পরিচিত এই পরিকল্পনায় আগামী ১৪ বছরে কিভাবে তেল নির্ভর সউদির অর্থনীতি আবার গড়ে তোলা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। গত দুই বছরে সউদি আরবের অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরপতন হওয়ায় তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো নিজ দেশে তেলের দাম বাড়িয়েছে ৮০ শতাংশ। এমনকি বিদেশি ব্যাংকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ ঋণ নেয়ার কথাও জানিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন পরিকল্পনার একটা মূল বিষয় হচ্ছে, তেলের ওপর থেকে সউদির অর্থনীতির নির্ভরতা কমিয়ে আনা। দেশটির অর্থনীতির ৮০ শতাংশ গড়ে উঠেছে তেল বিক্রির টাকায়। যে কারণে নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনায় দেশের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে যাতে করে সার্বভৌম একটা সম্পদ গড়ে তোলা যায়। সউদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সোমবার জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়েই তারা আবার এই অর্থনীতিক সংস্কার শুরু করছেন। শুধু তাই না, বিদেশে বসবাসরত সউদি নাগরিকরা যাতে সেখানে ভ্রমণের জন্য যেতে পারেন এবং অর্থ ব্যয় করেন সেই উদ্দেশ্যে তাদের জন্য ৫ বছর মেয়াদি গ্রিন কার্ডও চালু করবেন তারা। খবরে বলা হয়, সউদি আরবের মন্ত্রিসভা ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের এক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যার মধ্যদিয়ে তেল বিক্রির ওপর দেশটির নির্ভরশীলতার অবসান ঘটবে। এই সংস্কার পরিকল্পনার একটি অংশ হচ্ছে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তেল সংস্থা আরামকোর শেয়ার বিক্রি করে একটি আর্থিক তহবিল গড়ে তোলা। আরামকোর ৫% শেয়ার বিক্রি করা হবে, যার মূল্য ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিক্রি থেকে যে তহবিল গঠিত হবে তার আকার দুই ট্রিলিয়ন ডলার। নতুন ভিসা প্রথা চালু করা হবে, যার মধ্যদিয়ে মুসলমান এবং আরবরা সউদি আরবে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে পারবেন। খনি এবং সমরাস্ত্র প্রস্তুত খাতে বিনিয়োগ করা হবে। কাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে। অপর এক খবরে বলা হয়, সউদি রাজস্বের ৮০ শতাংশ তেল থেকে আসলেও সম্প্রতি তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় ব্যাপক বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে তেল সম্পদে সমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশটি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যই নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনা বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। বাদশাহ সালমানের পুত্র এবং ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদকে এই অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনার জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানির কিছু অংশকে বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে একটি সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল তৈরি করা তার পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে বলা হয়। প্রিন্স মোহাম্মদের সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সউদির মালিকানাধীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার ৫ শতাংশ বিক্রি করে একটি সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা। সব মিলিয়ে এই তহবিলের আকার দাঁড়াতে পারে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে। পাশাপাশি তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে খনিজ উত্তোলন এবং সামরিক পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ওপর জোর দেয়া হয়েছে সংস্কার পরিকল্পনায়।
তবে বর্তমানের সস্তা তেলের যুগে এই সংস্কার কর্মসূচি কতখানি বাস্তবসম্মত এই প্রশ্নের জবাবে যুবরাজ বলেন, তেলের দাম যাই হোক না কেন সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সংস্কার বাস্তবায়নে বিলাস পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন তিনি। তবে যুবরাজ আশ্বস্ত করেছেন এই সংস্কার কর্মসূচির আওতায় দেশের দরিদ্র নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। প্রিন্স মোহাম্মদ একই সঙ্গে সউদি আরবের সিংহাসনের দ্বিতীয় উত্তরাধিকার এবং দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এপি, বিবিসি, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন