শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আড়াই যুগেও নিরাপদ নয় চেরনোবিল

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহতম পরমাণু বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ৩০ বছর আগে (১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল) সংঘটিত এ ঘটনায় পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেরনোবিল দুর্ঘটনার ৩০তম বার্ষিকী গতকাল উদযাপন করেছে ইউক্রেনের জনগণ। ওই বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিক নিহত হয় ৩১ জন। চেরনোবিলের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। আড়াই যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো বেলারুশের সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের চেরনোবিল এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোকে নিরাপদ বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। এসব এলাকার জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে, এমনকি গবাদিপশুর দুধেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যাচ্ছে। বেলারুশের সীমান্তবর্তী বর্তমান ইউক্রেনের ভূখ-ে অবস্থিত এই চেরনোবিল শহর। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক ইভেন্ট স্কেলে বিস্ফোরণের এ ঘটনাকে লেভেল-৭ এর দুর্যোগ বলে চিহ্নিত করা হয়। বিস্ফোরণে নিহত হন ৩১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হন পরমাণু কেন্দ্রটির কর্মী, উদ্ধারকর্মীসহ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। চেরনোবিল বিপর্যয় এখন পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণের ঘটনা। ঘটনার ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চেরনোবিল এবং এর আশপাশের এলাকার জল-স্থল-অন্তরীক্ষে নিরাপদ সীমার চেয়ে অনেক বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় ওই এলাকার গবাদিপশুর দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মাটির নমুনাতেও মিলেছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী তেজস্ক্রিয় পদার্থ। বেলারুশ সরকার পরিচালিত মিনস্ক সেন্টার ফর হাইজিন অ্যান্ড এপিডেমিওলজির তথ্যমতে, খাদ্য ও পানীয়তে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭ বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তা অনুমোদনযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক পরীক্ষাটি বলছে, দুধের নমুনায় ৩৭ দশমিক ৫ বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে। এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে স্ট্রনসিয়াম-৯০, সিজিয়াম-১৩৭, আমেরিসিয়াম ও প্লুটোনিয়াম অন্যতম। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চেরনোবিলের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নানা সময়ে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা ফুসফুস এবং থাইরয়েড ক্যান্সার নিয়ে ওই দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় এখনো সুস্থ-সবল শিশু ২০ শতাংশেরও কম। বহু শিশু বিকলাঙ্গতা অথবা ¯œায়ুতন্ত্রের গোলযোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, চেরনোবিল দুর্ঘটনা হিরোশিমায় ফেলা আণবিক বোমার চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন এক স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো। পরে স্থানীয় এক গির্জায় নিহতদের পরিবারের জন্য আয়োজিত এক প্রার্থনা সভায় অংশ নেবেন তিনি। ভয়াবহ ওই দিনটিকে স্মরণ করতে ইতিমধ্যে চেরনোবিল অঞ্চলের সাবেক বাসিন্দাদের অনেকে গত সোমবার রাতেই সেখানে ছুটে গেছেন। এদেরই একজন হলেন ৬৬ বছরের প্রিপিয়াত। তিনি চেরনোবিলের শ্রমিকদের সঙ্গে ওই একই এলাকায় বসবাস করতেন। দুর্ঘটনার পর আরো অনেকের সঙ্গে তিনি চেরনোবিল ছেড়ে আসেন। ওই নারী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আজ অনেক দিন পুরনো অ্যাপার্টমেন্টটা দেখলাম। ওটা এখন জঙ্গল হয়ে গেছে। উঠোন ভরে গেছে গাছগাছালিতে। সেগুলো এখন ছাদের মাথা ছাড়িয়েছে। সবকটা ঘর খালি পড়ে আছে। জানালার কাচগুলো ভেঙে পড়েছে। গোটা বাড়িটাই এখন ধ্বংসস্তূপ।
খবরে বলা হয়, ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল পাওয়ার প্ল্যান্টের ৪ নম্বর রিঅ্যাক্টরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আওতাধীন ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। ওইদিন গভীর রাতে নিরাপদ শীতলীকরণের ওপর একটি সাধারণ পরীক্ষা চালানোর সময় এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। কর্তৃপক্ষ বলছেন, কর্তব্যরত কর্মীদের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও এ দুর্ঘটনা নিয়ে অনেক রহস্য আজও অমীমাংসিত অবস্থায় রয়ে গেছে। দুর্ঘটনার ৩০ বছর পরও চেরনোবিল এলাকা মানুষশূন্য। বিস্ফোরণের আগে ওই অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের পর অনেক মানুষ তেজস্ক্রিয়তার শিকার হলে সব অধিবাসীকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মাত্র ৩১ জন মারা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর প্রতিক্রিয়া ছিল ভয়াবহ। ২০০৫ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চেরনোবিলের পরমাণু বিস্ফোরণ সংক্রান্ত অসুস্থতায় ৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। তবে পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিস বলছে, জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে সম্ভাব্য মৃতের সংখ্যা অনেক কম করে দেখানো হয়েছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চেরনোবিলের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা ফুসফুস এবং থাইরয়েড ক্যান্সার নিয়ে ওই দুর্ঘটনাকে সাক্ষী মেনে বেঁচে আছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় এখনো বহু শিশু বিকলাঙ্গতা অথবা ¯œায়ুতন্ত্রের গোলযোগ নিয়ে জন্মাচ্ছে। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন