আগামী ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক মাসেরও কম সময় আগে জনমত জরিপে দেখা গেছে যে ২১ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিনি কংগ্রেসের কর্মকান্ড সমর্থন করে ও ৭৩ শতাংশ সমর্থন করে না। গত মাসে এ সমর্থন ছিল ১৯ শতাংশ। বর্তমানে নিরপেক্ষ ভোটারদের ১৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের এবং ১০ শতাংশ কংগ্রেসের কর্মকান্ড অনুমোদন করেন। খবর সিএনএন।
নির্বাচন বিশ্লেষক হ্যারি তার সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলেছেন যে, ডেমোক্র্যাটরা হাউজে ২৩টি আসন বেশি পেতে পারে। তার অর্থ তাদের আসন সংখ্যা হবে ২২৯। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ২০৫ আসনও পেতে পারেন যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৬৩ আসনের চেয়ে অনেক কম।
২০১৮ সালের পূর্ববর্তী মাসগুলোতে ১৭ শতাংশ সমর্থনের চেয়ে তা বেশি। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির মেয়াদের প্রথম দিকগুলোতে তার প্রতি সমর্থনের তুলনায় এই প্রথম কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন ২০ শতাংশের ঊর্ধে উন্নীত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ব্রেট কাভানার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান এবং ৬ অক্টোবর তার নিয়োগ নিশ্চিত করার মধ্যে ১ থেকে ১০ অক্টোবর এ জনমত জরিপ করা হয়। জনমত জরিপের দু’পর্বেই কংগ্রেসের ক্ষেত্রে মতামত একই প্রকার দেখা যায়। বোঝা যায় যে জনমত জরিপের ফলাফল কংগ্রেসের প্রতি জনগণের মতামতকে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রভাবিত করবে না।
প্রেক্ষাপট
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গত দু’বছরে কংগ্রেসের কর্মকান্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা রিপাবলিকানদের মধ্যে পরিবর্তনেরই ফল। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে শুরু হওয়া রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের ব্যাপারে রিপাবলিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বিশেষভাবে ইতিবাচক। একইভাবে রিপাবলিকান উদ্যোগে কর সংস্কার বিল কংগ্রেস পাশ হওয়ার অব্যবহিত পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেও তা একই প্রকার ছিল।
বিপরীত দিকে কংগ্রেস সাশ্রয়ী মূল্যের প্রযতœ আইনের (অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট) গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বাতিলে ব্যর্থ হওয়ার পর গত গ্রীষ্মে কংগ্রেসে রিপাবলিকান রেটিং ১৬ শতাংশে নেমে আসে।
রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই কাভানার নিয়োগ নিশ্চিত দেখতে চাওয়া সত্তে¡ও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। কাভানার নিয়োগের প্রেক্ষিতে ৩৬ শতাংশ রিপাবলিকান এখন কংগ্রেসের কর্মকান্ড অনুমোদন করে যা গত মাসে ছিল ৩১ শতাংশ। যাহোক, আগস্টে যতটা ছিলেন, তার চেয়ে রিপাবলিকানরা বেশি ইতিবাচক, সম্ভবত গত জুলাইতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাভানার নিয়োগ দেয়ার পর সে নিয়োগ নিশ্চিত করতে সিনেট জুডিশিয়রি কমিটির অনুমোদনের প্রতিফলন হিসেবে তা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামের সহযোগীরা ক্রমবর্ধমানভাবে তার যুক্তি মেনে নিচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটরা ‘জনপ্রিয়’ হয়ে উঠেছে, নির্বাচনের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে রিপাবলিকানা চেষ্টা করছে ট্রাম্পের কথা দিয়ে ভোটারদেরকে অনুপ্রেরিত করতে।
আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি, ট্রামের সাথে যুক্ত রাজনৈতিক কর্মী কমিটির সেচ্ছাসেবী অংশ, মঙ্গলবার মাল্টি-স্টেট বিজ্ঞাপন কিনেছে, যার লক্ষ্য ১৫ টি রাজ্যে সেনেট বা কংগ্রেসিয়াল ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষন করা। ‘ডিভিশন বাই ডিটিমিডেশন’ শিরোনামে $ ১.২ মিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল প্রচারাভিযানের প্রথম লক্ষ্য ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রচারাভিযানে আলোকপাত করা।
কিন্তু রাষ্ট্রপতির সমালোচকরা বলেছেন, ট্রাম ও রিপাবলিকানরা তাদের প্রতিপক্ষকে চরমপন্থী হিসাবে চিত্রিত করে বিভক্ত করছে এবং ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের প্রতি সহিংস ভুমিকার কথা উল্লেখ করেছে। এবং কিছু ডেমোক্রেট বিশ্বাস করেন যে, কাভানহ যুদ্ধে বাম শক্তির উত্থাপন ও নির্বাচনী ক্ষতির পরিণতি ভোটারদের স্মরণ করিয়ে তাদের নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে।
মধ্যবর্তী এ নির্বাচনে ভোটাররা গর্ভনর, রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেটর নির্বাচন করবেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ৪৩৫টি আসনে, সিনেটের ১০০টি আসনের ৩৫টি আসনে এবং ৩৯টি স্টেট ও টেরিটোরিয়াল গর্ভনরশীপের ক্ষেত্রে ভোট দেবেন মার্কিন ভোটাররা।
বলা হচ্ছে, ডেমোক্রাটদের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচনটি একটি সুযোগ। তারা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তবে ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মসূচিকে কোণঠাসা করতে পারবেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিবাসন, নারীর অধিকার, সুপ্রিম কোর্টের মনোনয়ন, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দুই ডজনের বেশি আসন পেতে হবে ডেমোক্রাটদের। ফাইভ থার্টি এইট নামে একটি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ক্ষেত্রে ডেমোক্রাটদের সুযোগ রয়েছে ৭৬ শতাংশ। সিনেটের ১০০টির ক্ষেত্রে ৫১টি দখলে রয়েছে রিপাবলিকানদের। ফলে এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রিপাবলিকানদের ৬৬ শতাংশ সুযোগ রয়েছে।
পিউ রিসার্চ ইনস্টিটউটের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ভোটাররা মধ্যবর্তী এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী। এতে দেখা যায়, ৭২ শতাংশ ভোটার কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়াবে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরে অভিবাসন, স্বাস্থ্যসেবাসহ বেশ কিছু ইস্যু ভোটারদের কাছে বেশ গুরুত্ব পাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন