বেশ কয়েক মাস ধরে জটিল ও দুরূহ দর কষাকষির পর অবশেষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার চুক্তি অনুমোদন করেছে ২৭ টি সদস্য দেশ। রোববার ব্রাসেলসে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এই চুক্তি অনুমোদন করে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানিয়েছেন, ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ব্রেক্সিট ইস্যুতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দলিল স্বাক্ষর করেছেন। প্রথম দলিলটি হচ্ছে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার চুক্তি, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডিভোর্স ডিল’। জুন ২০১৬-এর ঐতিহাসিক গণভোটের পর ব্রেক্সিটের শর্তগুলো নির্ধারণ করা হয় এই দলিলে। ওই সময় দেখা যায় ৫২ শতাংশ মানুষ চায় ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে এই সংস্থায় যোগ দিয়েছিল। ৫৮৫ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এই আইনি দলিলে নাগরিক অধিকার, তথাকথিত ‘ডিভোর্স সেটেলমেন্ট’’ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ও দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের মধ্যে দুর্ভেদ্য সীমান্ত স্থাপনা ঠেকানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ব্রিটেনে কতদিন ধরে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত পালাবদল চলবে সেটি নিয়েও এতে আলোচনা করা হয়েছে। এই সময়ে ব্রিটেন ও ইইউয়ের মধ্যে সম্পর্কে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। দুই পক্ষই ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করবে। মার্চ ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এই পালাবদলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দলিলটি একটি রাজনৈতিক ঘোষণা। এটা কোনও আইনি দলিল নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কের বিভিন্ন শর্তের প্রস্তাব রাখা হয়েছে ২৬ পৃষ্ঠার এই দলিলে। ভবিষ্যতে বাণিজ্য সম্পর্কের লক্ষ্য, সমন্বিত পররাষ্ট্র নীতি, অপরাধের বিচার, আইন প্রয়োগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এতে। এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছিলেন, তার চুক্তি বৃটেনের উজ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া আগামী বছর তার দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে তা হবে পুরো দেশের জন্য এক নতুন যুগ ও পুনরুজ্জীবন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন হলেও এ চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হতে হবে। কিন্তু সেখানে সমস্যা রয়ে গেছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র রক্ষণশীল দলের এমপি সহ অনেক এমপি এ ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। আগামী ২৯ মার্চ, ২০১৯ তারিখে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ করার কথা রয়েছে ব্রিটেনের। বৈঠকের পরে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রাইবাউস্কাইট বলেন, ‘ব্রেক্সিট চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে কিন্তু বের হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এখনও অনেক বাকি আছে।’ আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন