কোলেস্টেরল বাড়লে হৃদরোগ হয়। শুধু কি তাই? কোলেস্টেরল যদি বেড়ে যায়, তাহলে রক্তে সংবহনকারী ধমনীর মধ্যেও পরিবর্তন ঘটে থাকে, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে আথেরোস্কেলরোস্সি। এর ফলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। হৃৎপিন্ডের ক্ষেত্রে তাই হার্ট অ্যাটাক, মস্তিস্কের ক্ষেত্রে স্ট্রোক, কিডনির ক্ষেত্রে হলে রেনাল ফেলিওর ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রার সঙ্গে গ্লাডার স্টোনেরও সম্পর্ক আছে। তবে এটাও ভাবতে হবে, কোলেস্টেরল হচ্ছে শরীরের একটি স্বাভাবিক উপাদান।
* মানব শরীরে কোষগুলোর যে মেমব্রেন আছে কোলেস্টেরল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। * ব্রেন নার্ভের স্বাভাবিক কাজের জন্য কোলেস্টেরলের খুব প্রয়োজন। এটি ছাড়া নিউরোনের কাজ করা অসম্ভব। * কোলেস্টেরল থেকে বাইল বা পিত্ত তৈরি হয়। পিত্তরস ছাড়া পাচন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না। * ভিটামিন ডি তৈরি হয় কোলেস্টেরল থেকে। * বিভিন্ন হরমোন তৈরি হয় কোলেস্টেরল থেকে। এইসব হরমোনকে বলা হয় স্টেরয়েড হরমোন যা রক্তের স্বাভাবিক চাপ বজায় রাখতেও প্রয়োজন হয়। মিনারেল ও কোরটিকয়েড পুরুষ ও স্ত্রীর শরীরের স্বাভাবিক বিকাশের কাজের জন্য প্রয়োজন হয়। সেক্স হরমোন তৈরি হয় কোলেস্টেরল থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অতএব কোলেস্টেরল আমাদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদার্থ।
মানব শরীরে কোলেস্টেরলের উৎস দু’টি। প্রথমটি হল, ডায়েট আর দ্বিতীয়টা হল শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু রাসায়নিক পদ্ধতিতে কোলেস্টেরলের সৃষ্টি। যকৃৎ (লিভার) এবং অন্ত্র (ইনট্স্টোইন) মূলত কোলেস্টেরল তৈরি করে। আমাদের শরীর নিউক্লিয়াসযুক্ত অনেক কোষই এই পদার্থ তৈরি করতে সক্ষম। কোলেস্টেরল তৈরি হওয়ার পর তা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত রক্তের বিভিন্ন লাইপ্রোপ্রোটিনের সঙ্গে এই কোলেস্টেরল যুক্ত হয় এবং তা লিভারে ফিরিয়ে আনার কাজও করে। এই লাইপ্রোপ্রোটিনগুলো অর্থাৎ কোলেস্টেরল সব সময় এক ডাইনামিক ইকুইলাইব্রিয়াম এ-বিরাজ করে। কোলেস্টেরল বাহক এই লাইপ্রোপ্রোটিনগুলোর কোলেস্টেরলকে বহন করে নিয়ে যায়, তাকে আমরা বলি এলডিএল। এটাকে আমরা ক্ষতিকর বা ব্যাড কোলেস্টেরল হিসেবে জানি। আবার বিভিন্ন টিস্যু থেকে যে কোলেস্টেরলকে ফেরত নিয়ে আসে, তাকে আমরা বলি এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা লোড কোলেস্টেরল। এছাড়াও ভিএলডিএল নামক আর একটি পদার্থ আছে। ট্রাইসারাইড এর কথাও মাথায় রাখতে হবে। কেন না, এটিও বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
হোমিও চিকিৎসা : লক্ষণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এর সমাধান করা যায়। তবে অবশ্যই খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। পেশাগত জীবনে দেখেছি, যারা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান এবং অলস জীবন যাপন করেন, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন