মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরও উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার চান জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা। পাঁচ দিনের রাখাইন সফরেরর অভিজ্ঞতায় দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে এমন আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৩৫টি স্থাপনা তৈরির অনুমোদন দেওয়া মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের পর গত ১৩ ডিসেম্বর ‘স্মল স্কেল কুইক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টস’ নামের এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ। দুই সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হচ্ছেন হাওলিয়াং জু এবং বের্নার্ড দোলে। হাওলিয়াং জু ইউএনডিপি’র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর বের্নার্ড দোলে ইউএনএইচসিআর-এর উপ আঞ্চলিক পরিচালক। রাখাইন সফরকালে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে সেখানকার বিদ্যমান নানা চ্যালেঞ্জ এবং অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের এ সফরে জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে ছাড়াও সেখানকার বেশকিছু গ্রাম পরিদর্শন করেন। ‘স্মল স্কেল কুইক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টস’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য দ্রুত প্রাথমিক চাহিদা পর্যালোচনা করেন। আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার উন্নয়ন এবং সামাজিক মেলবন্ধনকে উৎসাহিত করে। অপরদিকে, চীন রাশিয়ার ভূমিকায় আবারও সংশয়ের মুখে পড়েছে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের এক খসড়া প্রস্তাব। জাতিসংঘের সঙ্গে এ বছর জুনে সম্পন্ন হওয়া চুক্তি অনুযায়ী রাখাইন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে ওই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কূটনীতিক সূত্রে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীন-রাশিয়া এ সংক্রান্ত আলোচনা বয়কট করেছে। উল্লেখ্য, অতীতেও একাধিকবার চীন-রাশিয়ার বিরোধিতায় নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয়। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একটি খসড়াটি প্রস্তাব সরবরাহ করে। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার স্বেচ্ছামূলক-নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করাই এই খসড়া প্রস্তাবের লক্ষ্য। কূটনীতিকরা জানিয়েছে, এ নিয়ে কয়েক দফায় আলোচনা হতে পারে। যুক্তরাজ্যের উত্থাপিত প্রস্তাবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। জুনে মিয়ানমারের নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে ওই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই চুক্তিটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারী নাট ওৎসবি। এক সংবাদমাধ্যমকে সে সময় তিনি জানান, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিবেশ গড়ে তোলার কাজে সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর করেছে।’ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ ছিল ওই খসড়া প্রস্তাবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের নিয়মিত নিরাপত্তা পরিষদের কাছে রিপোর্ট করার আহ্বানও ছিল এতে। তবে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় চীন-রাশিয়ার অনুপস্থিতি একে সংশয়ের মুখে ফেলেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া সোমবার রয়টার্সকে বলেন, আমার কাছে এটি অযথার্থ, অসময়োচিত ও নিরর্থক মনে হয়। চীনা দূত মা ঝাওজু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সংস্থাটিতে নিযুক্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধিও তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, খসড়া প্রস্তাবটি ভোটাভুটির জন্য তোলা হবে কিনা অথবা তোলা হলে কখন তোলা হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। শেষ পর্যন্ত এটি ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন করা হলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে অন্তত ৯টি ভোট পেতে হবে। এর পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে চীন-রাশিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনও সদস্য দেশ প্রস্তাবে ভেটো দেবে না। স্থায়ী সদস্যদের কেউ ভেটো দিলে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুকে জটিল, বড় ও আন্তর্জাতিকীকরণ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক। রয়টার্স, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন