শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নীরবতা ভাঙলেন পানামা পেপার্স ফাঁসকারী জন ডো

দায়মুক্তি ও আইনি সুরক্ষার শর্তে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার প্রস্তাব

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপার্স ফাঁস করা হুইসেলব্লোয়ার জন ডো প্রথমবারের মতো নীরবতা ভেঙে শর্ত সাপেক্ষে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর কর ফাঁকির এসব ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার বিপরীতে শর্ত হচ্ছে, সরকারগুলোকে প্রশ্নাতীত অন্যায় ফাঁস করে দেয়া সব হুইসেলব্লোয়ারদেরকে তথ্যের গোপনীয়তা ভাঙার অভিযোগে শাস্তি থেকে দায়মুক্তি ও আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। যাদের মাধ্যমে অফশোর লেনদেন সংক্রান্ত ফাঁস করা এক কোটি ১০ লাখের বেশি নথি প্রকাশ্যে আসে সেই জার্মান পত্রিকা সুইডয়েচে সাইটং ও ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে (আইসিআইজে) পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। শুক্রবার আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বিপ্লব ডিজিটাইজড হবে শিরোনামে এক হাজার ৮০০ শব্দের বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। আইসিআইজে বলছে, পানামা পেপার্স ফাঁস করা উৎস থেকেই বিবৃতিটি এসেছে বলে সুইডয়েচে সাইটং নিশ্চিত করেছে।
ফাঁস করা নথিগুলো নিয়ে প্রায় এক বছর আগে এই জার্মান পত্রিকাটির সঙ্গে যোগাযোগ করা উৎসটি নিজেকে জন ডো নামে পরিচয় দিয়েছিল বলে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সুইডয়েচে সাইটংয়ের সহ-প্রধান সম্পাদক ভুলফগ্যাং ক্রাখ। সুইডয়েচে এসব নথিপত্র প্রকাশের আগে এর সবগুলোর সত্যতা আইসিআইজের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমেই জনসম্মুখে উন্মুক্ত করা হয়। হুইসেলব্লোয়ার জন ডো আয় বৈষম্যকে বর্তমান সময়ের অন্যতম ডিফাইনিং ইস্যু অভিহিত করে বিবৃতিটি শুরু করেন।
পানামার আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ায় অফশোর লেনদেন সংক্রান্ত নথিগুলো এপ্রিলের শুরুতে প্রকাশ্যে আসে। পানামা পেপার্স নাম দেয়া এসব নথি ফাঁসের পুরো বিষয়টিকে বলা হচ্ছে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি। গত ৪০ বছর ধরে মোস্যাক ফনসেকা রাজনীতিবিদসহ তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ও কর ফাঁকি দেয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে। এতে করে ওইসব ব্যক্তিরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে একজন সরকারপ্রধানসহ কয়েকজন পদত্যাগেও বাধ্য হয়েছেন।
আলোচিত এসব নথি ফাঁস করা ব্যক্তি সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও তিনি কোনো সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেন না বলে বিবৃতিতে দাবি করেন জন ডো। কোনো সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে আমি কাজ করি না, সরাসরি বা কন্ট্রাকটর হিসেবে এবং আমি কখনই করব না। নথিগুলো সুইডয়েচে ও আইসিআইজ দিয়ে প্রকাশের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও নেই দাবি করা এই হুইসেলব্লোয়ার বলছেন, কর ফাঁকির সুযোগ দিতে মোস্যাক ফনসেকার অন্যায়ের ব্যাপকতা ভালোভাবে বুঝতে পেরেই তিনি এ কাজ করেছেন। মোস্যাক ফনসেকার মুখোশ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম; কারণ আমি মনে করি এটির প্রতিষ্ঠাতা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্লায়েন্টদের এসব অপরাধে তাদের ভূমিকার বিষয়ে অবশ্যই জবাব দেয়া উচিত। এ পর্যন্ত এসবের সামান্যই আলোর মুখ দেখেছে। মোস্যাক ফনসেকা সম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে তার ক্লায়েন্টদের জন্য শেল কোম্পানি খুলে দেয়া ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে। আর এই শেল কোম্পানি হচ্ছে একটি বৈধ ব্যবসার খোলস। মূল অর্থের মালিক কে, তা গোপন রাখার পাশাপাশি ওই অর্থের ব্যবস্থাপনা করাই এ ধরনের কোম্পানির কাজ।
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন দেশে কোম্পানির কাগুজে ব্যবসায় অবৈধ উৎসের টাকা বৈধ হয়ে যাবে; তারপর চলে যাবে নিরাপদ কোনো অ্যাকাউন্টে। ওই টাকার মালিক মোস্যাক ফনসেকার ওই ক্লায়েন্টই থাকবেন, তবে সরকারের কাছে তাকে মোটা অংকের ট্যাক্স দিতে হবে না। পানামার এই লফার্মের ঘৃণ্য কর্মকা-ের সবগুলো জানতে হয়ত বেশ কয়েকবছর থেকে কয়েক দশকও লেগে যেতে পারে বলে মন্তব্য হুইসেলব্লোয়ার জন ডোর, যার প্রকৃত নাম এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আইসিআইজে ইতোমধ্যে পানার্মা পেপার্সের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী ৯ মে প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর কর্তৃপক্ষগুলোকে কর ফাঁকির এসব অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে জন ডো বলছেন, পানামা পেপার্স থেকে হাজার হাজার (কর ফাঁকির) মামলা এগিয়ে নেয়া যেতে পারে, কেবলমাত্র যদি আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এগুলো হাতে পায় এবং আসল তথ্যগুলো যাচাই করতে পারে। তাই আইসিআইজে ও সুইডয়েচে আইনপ্রয়োগকারী কোনো সংস্থার হাতে পানামা পেপার্স তুলে দিতে পারবে না বললেও হুইসেলব্লোয়ার জন ডো বিবৃতিতে তাদের সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি, যেভাবেই হোক, আইন প্রয়োগকারীদের ব্যাপ্তি বাড়াতে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক; এতে আমি সক্ষম।
তবে একাজ করতে প্রশ্নাতীত অন্যায় ফাঁস করে দেয়া সব হুইসেলব্লোয়ারদের সরকারি শাস্তি থেকে তাদের দায়মুক্তি দিয়ে আইনি সুরক্ষা দেয়ার শর্ত দেন পানামা পেপার্সের ফাঁসকারী। সরকারগুলো অন্যায় কাজের তথ্য ফাঁস করা হুইসেলব্লোয়ারদের আইন করে সুরক্ষা না দিলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে শুধু নিজেদের সামর্থ্য ও বিশ্বজুড়ে মিডিয়া কভারেজের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ নুরআলম শরকার ৩ মে, ২০১৮, ৫:৫৭ পিএম says : 0
আমিও এটাই খুজেছিলাম এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন