মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে প্রয়োজনে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে জরুরি অবস্থা জারির হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে চলমান আংশিক অচলাবস্থা বছরব্যাপী থাকলে সেজন্য প্রস্তুত আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডেমোক্রেটদের সঙ্গে বৈঠকের পর শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট দেয়াল নির্মাণের অর্থ ছাড়া বাজেট বিলে স্বাক্ষর না করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘটনায় অস্বস্তিতে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেননা ইতোপূর্বে তাদের দিক থেকে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের দাবি উঠেছিল। শুক্রবার টুইটারে দেওয়া পোস্টে তার ইমপিচমেন্টের আহ্বানকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানুয়ারি মাসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইমপিচমেন্ট নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ট্রাম্পের। এমন পরিস্থিতিতেই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনী প্রচারণায় অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে যে কোনো মূল্যে দেয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে বসার পর থেকে সেই লক্ষ্য পূরণে একের পর এক পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে দেয়াল নির্মাণে আপত্তির কথা জানিয়ে আসছিল। বিবিসি জানায়, গত বছরের একেবারে শেষ দিকে বাজেট নিয়ে কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্টের মতবিরোধ প্রকট হলে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দেয়। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসময়ের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পরে দেয়াল নির্মাণের খরচসহ একটি বাজেট বিল পাস করলেও সিনেটে পর্যাপ্ত ৬০ ভোট না পাওয়ায় তা আটকে যায়। ফলে ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ট্রাম্পের মেয়াদে কেন্দ্রীয় সরকারের তৃতীয় দফা অচলাবস্থা। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রায় ৮ লাখ কর্মীকে দুই সপ্তাহ ধরে বেতন ছাড়াই থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদের নতুন সদস্যরা দায়িত্ব নিলে ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ট্রাম্পের সীমান্ত নিরাপত্তা তহবিলে ১৩০ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাবসহ নতুন একটি বিল অনুমোদন করে; অবশ্য তাতেও মন গলেনি হোয়াইট হাউসের। ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ব্যয় পরিচালনার ওই বিলটিকে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর আগে তাতে উচ্চকক্ষের অনুমোদন লাগবে। রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ট্রাম্পের সবুজ সংকেত না পেলে তারা সিনেটে নতুন বিলের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্রেটরা ফিরে পেলেও সিনেটে রিপাবলিকান আধিপত্য প্রবল। হোয়াইট হাউসের শুক্রবারের বৈঠক নিয়ে প্রথমদিকে উচ্ছ¡সিতই ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আলোচনাকে ‘খুবই ফলদায়ক’ হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ওই বৈঠকে অচলাবস্থা বছরব্যাপী রাখার হুমকি দেয়ার কথাও স্বীকার করে নেন। “আমি বলেছি, একেবারে এই কথাই বলেছি। যদিও আমার মনে হয় না এটি হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। যা করছি তার জন্য গর্বিত আমি, আমি একে অচলাবস্থা বলছি না, দেশের নিরাপত্তা ও লাভের জন্য যা করা দরকার- একে আমি সেই নামেই অভিহিত করছি,” মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের। বাজেট বিলে কংগ্রেসের অনুমোদনকে পাশ কাটাতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহার করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবেও নিজের অনড় অবস্থানের ইঙ্গিত দেন এ রিপাবলিকান। “করতে পারি। আমরা জরুরি অবস্থা জারি করে দ্রুত (দেয়াল) নির্মাণ করতে পারি। দেয়াল নির্মাণের সেটি আরেকটি পথ হতে পারে,” বলেন ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদের নতুন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাদের বৈঠকটি ছিল ‘বাদানুবাদে পূর্ণ’। “আমরা তাকে সরকারের অচলাবস্থা নিরসনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। তিনি পাত্তা দেননি। উল্টো তিনি এ অচলাবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চালাবেন বলে জানিয়েছেন। হতে পারে এটি কয়েক মাস কিংবা বছর,” বলেছেন সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার। অচলাবস্থা নিরসনে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি হোয়াইট হাউসের সঙ্গেও শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতাদের বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও কোনো সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন