নতুন বছরের শুরুতেই আবারও উচ্ছেদের আশঙ্কা রোহিঙ্গা শিবিরে। অভিযোগ, বারুইপুরের বেলেগাছি ও জীবনতলার ঘুটিয়ারিতে যে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার আছে, তাদের প্রতি মুহূর্তে বাসা বদলের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের অভিযোগ, শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব, এমনকী পুলিশও তাঁদের বাড়ি গিয়ে বারবার চাপ দিচ্ছেন বারুইপুর ও জীবনতলা ছেড়ে যাওয়ার জন্য। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হুসেন গাজি বলেন, ‘পুলিশ ওদের বারবার হুমকি দিচ্ছে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। এই ঠান্ডায় ওঁরা হঠাৎ কোথায় যাবেন? আমরা ওঁদের পাশে আছি। যা লড়াই হওয়ার হবে, ওঁদের কোথাও যেতে দেব না।’
গত অক্টোবরেও জমজমাট ছিল বারুইপুরের হাড়দহের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। কিন্তু পুলিশের চাপে সেই শিবির ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় সবক’টি পরিবার। তবে তাঁরা কোথায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন, তা বলতে চাননি হুসেন গাজি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফ থেকেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সে সময় হুসেন জানিয়েছিলেন, ‘পুলিশি জুলুম বাড়ছিল রোজ রোজ। তা ছাড়া অসমে এনআরসি হওয়ায় ভয় পেয়েছিলেন সবাই। ভারত সরকার সবাইকে চিহ্নিত করে মায়ানমারে পাঠাতে পারে, এই আশঙ্কায় সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গিয়েছেন।’
২০১৮-এর শুরুতে বারুইপুর ব্লকের একেবারে শেষ প্রান্তে ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশনের কাছে অস্থায়ী শিবিরে এসেছিল রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ছ’টি পরিবার। বাংলাদেশ থেকে দিল্লি হয়ে তাঁরা আশ্রয় পেয়েছিলেন বারুইপুরে। সেখানে তাঁদের জন্য টিন, বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শিবির করেছিল ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি’ নামে একটি সংগঠন। কয়েক মাসের মধ্যে সেই শিবিরে আশ্রয় পায় ২৪টির মতো পরিবার। সদস্যসংখ্যা ছাড়ায় শতাধিক। পুজোর আগে হাড়দহ গ্রামে ৫১ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী ছিলেন। ছিল ১২-১৩টি শিশুও। জুবেদা বিবি, মহম্মদ শাহিদুলদের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জোর গলায় জানিয়েছিলেন, ‘ও দেশ থেকে প্রাণে বেঁচে এ দেশে এসেছি। আর দেশে ফিরব না। মরতে হলে এ দেশেই মরব।’ হাড়দহের বাসিন্দাদের বক্তব্য, শিবির থেকে সরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জীবনতলা, সন্দেশখালি, বাসন্তী, সড়বেড়িয়ার মতো জায়গাগুলোয় ঘর ভাড়া নিয়ে আছেন। কেউ কেউ আবার দিল্লি, হরিয়ানা সীমান্তে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। শাহিদুলের মতো অনেক রোহিঙ্গা যুবক বানতলা চর্মনগরী-সহ বিভিন্ন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কয়েকটি শিশু স্থানীয় মাদরাসাতেও ভর্তি হয়েছে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন