রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা স্থগিত

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। ডেভিড ফ্রিডম্যান বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে। ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ পরিকল্পনা কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত হতে পারে।
এদিকে ভয়াবহ মাত্রায় ইসরায়েলঘেঁষা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্বের খবরে নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলের রাজনৈতিক দল মেরেতৎজ-এর চেয়ারওম্যান টামের জ্যান্ডবার্গ। তিনি বলেন, কোন শতাব্দীতে ট্রাম্প তার ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রকাশ করতে চান তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। এটা দুঃখজনক যে নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে এগিয়ে রাখতে পরিকল্পনাটি প্রকাশের বদলে উল্টো এটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী আয়েলেট শাকেদ বলেন, ওয়াশিংটনের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সময়ের অপচয়।
ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’-তে দুই রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দখলকৃত গাজা উপত্যকা চলে যাবে মিসরের অধীনে। আর দখলকৃত পশ্চিম তীরের একাংশে থাকবে জর্ডানের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। পশ্চিম তীরের অবশিষ্ট অংশ শাসন করবে ইসরায়েল। এখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে ফিলিস্তিনি নেতারা ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে ফিলিস্তিনকে রাজি করাতে এগিয়ে আসেন সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা ফিলিস্তিনের ক্ষমতাসীন দল পিএলও-র কাছে তুলে ধরেন।
হামাসের পলিট ব্যুরোর সদস্য ওসামা হামদান আল জাজিরা’কে বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনকে চাপ দিতে আরব দেশগুলোকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা যে সমাধানের কথা বলছে সেটা আসলে ইসরায়েলের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিরসনে শতাব্দীর সেরা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘেঁষা নীতি, ইসরায়েলের সঙ্গে তার জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আরব রাষ্ট্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে ট্রাম্পের আসন্ন শান্তি পরিকল্পনায় ভরসা করা কঠিন বলে মনে করে ফিলিস্তিনিরা।
ঐতিহাসিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইসরায়েলঘেঁষা। এ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাবে যতোবার ফিলিস্তিনি সুরক্ষার প্রশ্ন হাজির হয়েছে, ওবামা প্রশাসনের সময়কার একটি ঘটনার কথা বাদ দিলে সব ক্ষেত্রেই ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা প্রশাসনের শাসনামলে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে জাতিসংঘের ইসরায়েলি বসতিবিরোধী প্রস্তাবে ভেটো না দিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদে অবৈধ বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব পাসের পর ফিলিস্তিন প্রশ্নে ট্রাম্প-ওবামা দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। ট্রাম্প ওই সময়ই ইঙ্গিত দেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘২০ জানুয়ারির পর পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।’ কথা অনুযায়ীই ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর না যেতেই ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চলতি বছরের মে মাসে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেন তিনি।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবেই ইসরায়েল-ঘেঁষা হলেও ওবামা প্রশাসন পর্যন্ত তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিল। বিগত মার্কিন প্রশাসনগুলো চাইতো, দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই অবস্থান ছিল তাদের। তবে ট্রাম্প সমগ্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে সেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই নতুন শান্তি প্রস্তাব তৈরির কথা জানান। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন