শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পানামা পেপার্স : কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য নিউজিল্যান্ড

প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য হিসেবে মনে করা হচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে। বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেয়া পানামা পেপার্সের ফাঁসকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কাগুজে কোম্পানি ও ট্রাস্টগুলোর অন্যতম কর ফাঁকি কেন্দ্র হচ্ছে নিউজিল্যান্ড। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার বিত্তবানরা বিশ্বজুড়ে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই দেশটিকেই চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পানামাভিত্তিক ল’ ফার্ম মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নিউজিল্যান্ড সম্পর্কিত ৬১ হাজারেরও বেশি নথি বিশ্লেষণ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। আর এর ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। আর তা দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাপে ফেলে দিয়েছে।
২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নতুন আইনের কারণে মোসাক ফনসেকা দেশটির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। করমুক্ত, গোপনীয়তা রক্ষা এবং আইনি নিরাপত্তার কারণে দেশটি যে ব্যবসার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত, সেই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। রেডিও নিউজিল্যান্ড, টিভিএনজেড এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিকি হ্যাগার তাদের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছেন। নিউজিল্যান্ডের রবার্ট থম্পসন হচ্ছেন মোসাক ফনসেকার মূল মাধ্যম। অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম বেন্টলিস নিউজিল্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক থম্পসন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানামা পেপার্সের ৪৫০০ নথিতে থম্পসনের নাম রয়েছে। থম্পসনের দাবি, তার অভিজ্ঞতায় ট্রাস্ট ব্যবহার করে কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি বেশি নেই; এবং তার প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে সম্পদ লুকিয়ে রাখায় সহায়তা করে না। রেডিও নিউজিল্যান্ডকে থম্পসন বলেন, আমার মনে হয়, এ ধরনের ধারণা প্রচলিত রয়েছেÑ নিউজিল্যান্ডের সব বিদেশি ট্রাস্ট বেআইনি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যা ভিত্তিহীন এবং মূলত অজ্ঞতাপ্রসূত। গত মাসে নিউজিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বিদেশি ট্রাস্ট বিষয়ক আইন পর্যালোচনা করবে। পানামা পেপার্সে দেশটির আইনি দুর্বলতার কারণে বিদেশি ট্রাস্টগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে কর ফাঁকি দেয়ার সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরার পর সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসে। উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে বিদেশি ট্রাস্টগুলো করের আওতামুক্ত। তবে নিউজিল্যান্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে করমুক্তির সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছেÑ এ ধরনের ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জন কি। পানামা পেপার্সকে ইঙ্গিত করে টিভিএনজেডকে তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়নি বললেই চলে। যাও-বা হয়েছে, তা পাদটীকায়। পানামার আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ায় অফশোর লেনদেন সংক্রান্ত নথিগুলো চলতি বছর এপ্রিলের শুরুতে প্রকাশ্যে আসে। ‘পানামা পেপার্স›’ নাম দেয়া এসব নথি ফাঁসের পুরো বিষয়টিকে বলা হচ্ছে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখের বেশি নথি থেকে গত ৪০ বছর ধরে মোসাক ফনসেকা রাজনীতিকসহ তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কিভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেয়ার পথ দেখিয়েছেÑ এসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে সেসব ব্যক্তি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে একজন সরকারপ্রধানসহ কয়েকজন পদত্যাগেও বাধ্য হয়েছেন। মোসাক ফনসেকা সম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে তার ক্লায়েন্টদের জন্য শেল কোম্পানি খুলে দেয়া এবং ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে। আর এই শেল কোম্পানি হচ্ছে একটি বৈধ ব্যবসার খোলস। মূল অর্থের মালিক কে, তা গোপন রাখার পাশাপাশি ওই অর্থের ব্যবস্থাপনা করাই এ ধরনের কোম্পানির কাজ। করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন দেশে কোম্পানির কাগুজে ব্যবসায় অবৈধ উৎসের টাকা বৈধ হয়ে যাবে, তারপর চলে যাবে নিরাপদ কোনো অ্যাকাউন্টে। ওই টাকার মালিক মোসাক ফনসেকার ওই ক্লায়েন্টই থাকবেন, তবে সরকারের কাছে তাকে মোটা অঙ্কের ট্যাক্স দিতে হবে না। পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার নিজেদের বিত্তবান ও সেলিব্রিটিদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে। এরইমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের বন্ধু, ব্রিটেন ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং চীন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে মোসাক ফনসেকার সহায়তা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন