সাদা বরফের প্রান্তরে পেঙ্গুইনদের মজার হেঁটে বেড়ানো কিংবা মহাসাগরের অতলে তিমিদের ইতিউতি সঞ্চরণ, দক্ষিণ মহাসাগরের জীব বৈচিত্র্যের সম্ভার মুগ্ধ করে এসেছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে পাল্টে যেতেই পারে ছবিটা, অন্তত তেমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ উষ্ণায়ন। আর তারই জেরে তিমি, পেঙ্গুইন, সিবার্ড, সিল, সামুদ্রিক মাছেদের প্রিয় খাবার ‘ক্রিল’ ক্রমেই দক্ষিণ মহাসাগর থেকে সরে গিয়ে বসতি গড়ছে দক্ষিণ মেরুর বরফ ঢাকা অংশে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ ভাবেই যদি ‘দেশান্তরী’ হতে থাকে ‘ক্রিল’ তা হলে সেখানকার জীব বৈচিত্রে ধস নামতে বেশি দেরি নেই আর। সম্প্রতি এরকমই একটি সমীক্ষা ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি ক্রিল অনেকটা কুচো চিংড়ির মতো প্রাণী। যারা সাম্প্রতিক সমীক্ষাটি চালিয়েছে সেই ব্রিটিশ আন্টার্কটিক সার্ভের সিমিয়ন হিল বলেন, ‘আমাদের গবেষণালব্ধ ফল জানাচ্ছে গত চল্লিশ বছর ধরে গড়ে ক্রিলের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তা ছাড়া তাদের বসতির পরিমাণও কমে আসছে। তার অর্থ একটাই। যে সব প্রাণীরা ক্রিল খেয়ে জীবন ধারণ করে তাদের খাবারের সংস্থান করার জন্য এখন ঢের বেশি একে অপরের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।’
তাদের গবেষণা কেন্দ্রীভূত ছিল স্কটিয়া সাগর এবং অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের উপর। আসলে ক্রিল, কুচো চিংড়ি এ গোত্রের প্রাণীদের বসতি এ অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি। সে জন্যই এ অঞ্চলটিকে বেছে নিয়েছিলেন সিমিয়নরা। তবে আজ থেকে নয়, গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে ১৯২০ সাল থেকে। সিমিয়ন জানালেন ১৯৮০ সালের পর থেকেই ক্রিলদের বসতি গড়ার আচার-আচরণে লক্ষ্মণীয় পরিবর্তন আসে। এর সঙ্গে এক বিশেষ ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। সেটির নাম ‘সাদার্ন অ্যানুলার মোড’ বা ‘স্যাম’। নিরক্ষীয় অঞ্চলের বাইরে দক্ষিণ গোলার্ধে কী রকম ‘প্রেশার জোন’ রয়েছে, এটা সেটিরই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আশির দশক থেকেই সেটিতে পরিবর্তন দেখা যেতে শুরু করে। উষ্ণতর, বেশি মেঘাচ্ছন্ন, ঝঞ্ঝাময় এবং কম বরফ-সম্পন্ন হতে শুরু করে এলাকাটি। পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করে ক্রিলের সংখ্যা কারণ ক্রিলের বংশবৃদ্ধির জন্য বরফের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়। সেই জন্য ক্রমেই আরও দক্ষিণে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার উজিয়ে আন্টার্কটিকার দিকে বসতি স্থাপন করার ঝোঁক বাড়তে থাকে। সিমিয়ন আরও বললেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আয়তনেও বেড়ে গিয়েছে ক্রিল।’ তার ব্যাখ্যা, ‘তার কারণ তাদের মধ্যে এখন বয়স্ক প্রাণীর সংখ্যা বেশি।’ অন্য দিক থেকে দেখলে যে সব প্রাণীর ক্রিলের ভরসায় বেচে থাকে তারা ক্রিলের নাগাল পাচ্ছে না। ফলে ক্রিল বৃদ্ধি পেলেও, খাবার হারাচ্ছে পেঙ্গুইন, তিমিরা। শুধু প্রাণীরাই নয়, ক্রিলদের উপর ভরসা করে থাকে মানুষ, চলে বাণিজ্যও। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন