নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে সবাই একজোট
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামেও বিক্ষোভ চলছে। বিলটির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই প্রতিবাদে একজোট হয়েছে মিজোরামের সব দল ও সংগঠন। গত বুধবার মিজোরাম রাজ্যের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার তরুণ এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আর এ দিনের বিক্ষোভগুলোতে দেখা মিলেছে নতুন মাত্রার। অনেক বিক্ষোভকারীকে ভারতকে বিদায় জানিয়ে চীনকে স্বাগত জানানো ‘হ্যালো চায়না, বাই বাই ইন্ডিয়া’ লেখা প্লাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন বহন করতে দেখা যায়। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘চীন জিন্দাবাদ’ স্লোগান সম্বলিত পোস্টার নিয়ে মিছিল করেন প্রতিবাদীরা। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, সাউথ এশিয়ান মনিটর ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
মিজোরামের রাজধানী আইজলে বুধবার বিক্ষোভে পথে নেমে আসে হাজারো মানুষ। বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কুশপতুল পোড়ানো হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানও বয়কটের হুমকি দেয়া হয় সেখান থেকে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা জানান, বিল প্রত্যাহার না করা হলে তার দল ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) তাদের শরীক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সাথে জোট ভাঙতে দ্বিধা করবে না।
আইজলে বুধবার ওই অঞ্চলের ছাত্র সংগঠনগুলোর ফেডারেশন ‘নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন’ (নেসো), এমজেডপি, ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমএ)-এর যৌথ মিছিল বের হয়। সেখানেই অনেকের হাতে ‘হ্যালো চায়না, বাই বাই ইন্ডিয়া’ লেখা পোস্টার ছিল। বেশ কিছু পোস্টারে ছিল চীনা হরফ।
বৃহস্পতিবারও আসামের বিভিন্ন অংশে বিল-বিরোধী আন্দোলন চলে। কংগ্রেস বিভিন্ন জেলায় জেলা শাসকের দফতরের সামনে অনশন করে। অন্যদিকে, আসাম আন্দোলনে নিহত ৮৫৫ জনের পরিবারকে রাজ্য সরকার যে স্মারক দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের পরিবার। বৃহস্পতিবার তেজপুর শহিদ পরিবার সমন্বয়রক্ষী পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির আগেই রাজ্য সরকারের দেওয়া স্মারক ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে।
নেসোর নেতা রিকি লালবিক্রমাবিয়া জানান, বিল নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। তাই কেউ কেউ হয়তো মনে করেছেন, ভারত সরকার যখন আমাদের কথা শুনছে না, তখন চীনের প্রতি হাত বাড়ানোই ভাল। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
বৃহস্পতিবারের মিছিলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ অংশ নেয়।
মিজো জিরলাই পাওলের সাধারণ সম্পাদক লালনুনমাবিয়া পুটু বলেন, আমরা শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত বিদেশীদের বিরুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই করে যাবো। বিলটি বাতিল করার জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সরকার যদি কান না দেয় তাহলে মিজোরা চুপচাপ বসে থাকবে না।
ইয়াং মিজো এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লালামাচুনা বলেন, সরকার যদি বিলের আওতা থেকে মিজোরামকে বাইরে না রাখে তাহলে সকল এনজিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রজাতন্ত্র দিবস বয়কট করবে। রাজ্যের সবেচেয়ে প্রভাবশালী এই সংগঠনের সঙ্গে মিজোরামের প্রায় ৪০% জনগণ রয়েছে।
লালামাচুনা বলেন, বিলের ব্যাপারে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে অনেক আপত্তি দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের অনুভূতির প্রতি সাড়া দিতে রাজি নন। এর মানে হলো কেন্দ্রীয় সরকার মিজোরামকে বিবেচনায় নিচ্ছে না। যদি তাই হয়, আমরাও ভারতের নাগরিক থাকতে চাই না। আমরা বরং চীনের সঙ্গে থাকবো, যেখানে আমাদের মতো মঙ্গোলয়েড গোত্রভুক্ত জনগণ রয়েছে।
বুধবার আসামের গৌহাটিতেও একই ধরনের বিক্ষোভের আয়োজন করে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। এই সংগঠনের বিদেশী বিরোধী বিক্ষোভের মুখে সরকার ‘আসাম চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।
মিজোর নাগরিক সংগঠনগুলো বলেছে যে, কেন্দ্রিীয় সরকার যদি বিদেশী অভিবাসী তোষণ নীতি অব্যাহত রাখে তাহলে তারাও বিক্ষোভে যোগ দেবে।
উল্লেখ্য, এই বিল অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, পারসি ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা ভারতে প্রবেশের পর ছয় বছর অবস্থান করলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত হবে। এজন্য তাদের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র থাকারও প্রয়োজন নেই। এই বিল আদিবাসীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে বলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
৮ জানুয়ারি লোকসভায় বিলটি পাস হয়। এখন রাজ্য সভার আগামী অধিবেশনে এটি পাস করার জন্য পেশ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন