শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

হিজবুলের কড়া হুঁশিয়ারি অবিলম্বে কাশ্মির ছাড়

আরো ১০ হাজার ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে কাশ্মির ছাড়ার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন। সে সাথে কাশ্মির জুড়ে আত্মঘাতী হামলা জোরালো করার হুমকি দেয়া হয়েছে। সংগঠনের কমান্ডার ও শীর্ষ নেতা রিয়াজ নাইকু বলেছেন, ভারতীয় সেনারা কাশ্মির না ছাড়লে তাদের কফিন মিছিলও থামবে না। সুদীর্ঘ এক অডিও বার্তায় নাইকু বলেন, কাশ্মির না ছাড়লে পুলওয়ামার ঘটনার মতো করেই নতুন নতুন ঘটনায় ভারতকে ‘কাঁদতে’ হবে। কাশ্মীর টাইমস, গ্রেটার কাশ্মির ও ওয়েবসাইট।
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামাতে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’র গাড়ি বহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে বহরের ৭০টি গাড়ির মধ্যে একটি বাস সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রাণ হারায় বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ- মোহাম্মদ। রিয়াজ নাইকু বলেন, আত্মঘাতী হামলাকারী একজন কাশ্মিরি, তার ওপর সংঘটিত সেনানিপীড়নই তার মনের ভেতরে এমন হামলার উসকানি সৃষ্টি করেছে।
রিয়াজ নাইকু বলেন, স্বাধীনতার উন্মাতাল আকাক্সক্ষায় মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে কাশ্মিরের তরুণরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে। কাশ্মিরের বাস্তবতাকে ‘দাসত্ব’র সঙ্গে তুলনা করে তিনি তার বার্তায় বলেন, আত্মসমর্পণের বদলে মৃত্যুকেই বেছে নেবেন তারা।
তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘যতক্ষণ না তোমরা কাশ্মির ছাড়ছ, এভাবেই কাঁদতে হবে তোমাদের। যতক্ষণ তোমরা এখানে থাকবে, ততক্ষণ তোমার সেনাদের কফিন ভরতে থাকবে লাশে।’
১৯ ফেব্রুয়ারি রিয়াজ নাইকু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তার এই অডিও বার্তাটি জনসম্মুখে আনেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের কোনও শক্তিই আত্মঘাতী হামলা থামাতে পারে না’। তিনি বলেন, স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় উন্মাতাল কাশ্মিরের তরুণরা। ‘আমরা আত্মাহুতি দেওয়া থামাবো না। আমরা বরং মরবো, তবু আত্মসপর্মণ করবো না। সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদের ১৫ বছর বয়সী শিশু তার শরীরে বিস্ফোরক বহন করবে আর সেটা তোমাদের গাড়িতে ছুঁড়বে। আমাদের কাছে দাসত্বের চেয়ে মৃত্যু ভালো’।
একই দিনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এস ধিলন সেনাপ্রধানের পূর্ববর্তী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে হুমকি দেন, কাশ্মিরে কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিলেই তাকে গুলি খেতে হবে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় বেসামরিকদের হস্তক্ষেপ না করার হুমকিও দেন তিনি। এর আগে সেনা অভিযানে বাধা দিলে কঠোর পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তিনি তরুণদের সঠিক পথে ফেরাতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান।
এদিকে পুলওয়ামায় হামলার জেরে কাশ্মীরে আরো ১০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। খবরে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি নির্দেশনা দিলে ১০ হাজারের বেশি সেনাকে দ্রুত বিমানে করে শ্রীনগরে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কাশ্মীরে নতুন করে মোতায়েন করা আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে রয়েছে, সিআরপিএফ-এর ৪৫টি কোম্পানি, সীমান্তরক্ষীর ৩৫ এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) ও ইন্দো-তিব্বত সীমা পুলিশের (আইটিবিপি) ১০টি করে কোম্পানি। এসব কোম্পানির প্রতিটিতে ৮০ থেকে ১৫০ জন করে সেনা সদস্য রয়েছে।
খবরে বলা হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে ভারত সরকার। শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত বাহিনী নামিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিককে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াত-ই-ইসলামি সংগঠনের আরও অনেক নেতাকে। দক্ষিণ এবং মধ্য কাশ্মীরের আরও অনেক এলাকায় তল্লশি অভিযান চলেছে। আগামী কয়েকদিন ধরে তল্লাশি অভিযান চলবে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে রুটিন তল্লাশি বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তাহরীকে হুরিয়ত এবং তার শাখা সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান এই প্রথম। এদিকে গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর হানার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব। তাদের দাবি, ৩৫-এ ধারা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রায় শোনায়নি সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে উপত্যকায় গণগ্রেফতার শুরু করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
কাশ্মিরের সাম্প্রতিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক পথে কাশ্মির সঙ্কটের সমাধান আসবে না। তবুও বলপ্রয়োগের নীতির পথেই এগোচ্ছে ভারত। কাশ্মীরিদের মন জয়ের বদলে বলপ্রয়োগের পথে গেলে তাদের মধ্যে যে আরো বেশি বিচ্ছিন্নতার বোধ জেগে উঠবে; কদিন আগে তা স্পষ্ট করে বলেছেন স্বয়ং একজন সাবেক সেনাকর্মকর্তা। সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউজএইটটিনকে বলেন, ‘আইইডি নামে পরিচিত বিশেষায়িত বোমা ব্যবহার করে কাশ্মিরে সিআরপিএফের গাড়িবহরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যে হামলা চালানো হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে বাড়বে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা। বসানো হবে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা চৌকি। আর হামলাকারীদেরই তা সুবিধা এনে দেবে। যত বেশি কড়াকড়ি করা হবে, তত বেশি মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে থাকবে। হয়রানির কারণে কাশ্মিরিদের সমর্থন সরে যাবে তাদের পক্ষেই, ভারত যাদেরকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়।’
কাশ্মিরের সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট হামিদা নাইম আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘ভারতের সরকার কাশ্মিরের তরুণদের কণ্ঠস্বর শুনছে না। ফলে বিপুল সংখ্যায় এসব তরুণেরা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।’ কাশ্মিরের আরেক বিদ্রোহী সংগঠন আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক কাতারভিত্তিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখছে কাশ্মিরের পুরো একটি প্রজন্মকে কীভাবে ভারত রাষ্ট্র চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Tareq Ahmed ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
Allahuakbar
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
War is not a solution ! Imran Khan, can you please talk to MODIJI !
Total Reply(0)
Farid Shahriar ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
ভারত যা করছে তা এখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ের!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
Kashmir crisis is from 1947, made & kept intentionally to produce unrest in this region!
Total Reply(0)
সত্য হক ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
কারাগারের রোজনামচা বইয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন “ভারতের উচিত ছিল গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা শান্তি চুক্তি করে নেওয়া।” এটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র সমাধান। বন্দুকের জোরে কাশ্মীরে কোনদিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবেনা এবং পৃথিবীর কোথাও হয়নি।
Total Reply(0)
আন্দালিব ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
একজনের ক্ষোভ অন্যের উপর তোলার এই নজির সর্বত্রই আছে- ভারতে মুসলিম নির্যাতন হলে এখানকার উগ্রবাদিরাও চান্সে থাকে হিন্দুদের এক হাত দেখে নিতে। এসব পরিহার করা উচিত- যার অপরাধ তারই প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত।
Total Reply(0)
আন্দালিবনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
Kashmiries want independence from India and Pakistan
Total Reply(0)
Monzur ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
ভারত আর পাকিস্তান দু'দেশই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীরসহ পুরো কাশ্মীরকেই নিজেদের অংশ বলে দাবী করলেও আসলে নিজ নিজ স্বাধীনতার শুরুতে কাশ্মীর তাদের কারও সাথেই ছিল না। ভারতের স্বাধীনতার প্রায় দু'মাস পরে মুসলমান সংখ্যাগুরু হলেও কেবল হিন্দু রাজার সিদ্ধান্তে কাশ্মীর ভারতে যোগ দেয়ার চুক্তি করে। কিন্তু সেই চুক্তির শর্ত ছিল যে কাশ্মীরের (অবিভক্ত) জনগনই ঠিক করবে তারা কোন দেশের সাথে থাকবে, অথবা স্বাধীন থাকবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে থাকা কাশ্মীরের অংশটি একরকম জোর করে নেয়া যার কোন নথিগত/আইনগত ভিত্তি নেই। প্রায় সত্তুর বছর ধরে কাশ্মীরিরের ভূমি নিয়ে দুই দেশের আজন্ম শত্রুতা চলছে, অথচ মানবিক আর যৌক্তিক পথে এগিয়ে কাশ্মীরের জনগনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিলে অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
Total Reply(0)
Osman goni ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:৩০ পিএম says : 0
Tolo takbir,kere an musrikiner hat hote muslim vhumi kasmir
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন