অবহেলিত সজনে ডাঁটা এখন আর ফেলনা নয়। এটা এখন ভদ্রলোকদের ডাইনিং টেবিলের সেরা আইটেম গুলোর অন্যতমও বটে। মূলত শহুরে ভদ্রলোকদের আগ্রহের কারণে বাজারে এখন সজনের কেজি ১০০ থেকে ১৬০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও বগুড়ার বাজারে সজনের প্রতিকেজি দাম ছিল ২০০টাকা ।
প্রবীণ ব্যক্তিরা এই সবজি সম্পর্কে বলেন, ৪ দশক আগে বাজারে সজনের কেনাবেচা হতোনা বললেই চলে। ওই সময় গ্রাম এলাকায় এর ওর বাড়িতে বা আড়া জঙ্গলের গাছে গাছে ঝুলতে থাকা সজনে ডাঁটা বিনা পয়সায় সংগ্রহ করে গরীব মানুষের অন্নের ব্যাঞ্জন (ভাতের) হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অবস্থা সম্পন্ন মানুষেরা তখন শখের রান্নার সময় সরষে ইলিশ বা সর্ষে টেংরা মাছের রান্নায় সজনের ডাঁটা কাজে লাগাতো।
৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে সজনে ডাঁটা বাজারে বিক্রির প্রচলন শুরু হয়। তবে ৯০’ দশকের আগে পর্যন্ত বাজারে সজনে ডাঁটাকে অবহেলিত সবজির কাতারে ফেলে রাখা হতো। ২০০০ সালের পর থেকে বাজারে বাড়তে থাকে সজনের কদর। গত এক দশক ধরে মওশুমের শুরুতে সজনের দর থাকে গড়পড়তা ২০০ টাকার মধ্যেই। পরে কমতে কমতে প্রতি কেজি সজনে ডাটার দর ৩০ টাকার নিচে আর নামে না ।
বগুড়ার সবজি বাজার ও কাঁচামালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘী, সান্তাহার, পাশ্ববর্তী নওগাঁ ও নাটোর জেলায় প্রচুর পরিমাণে সজনে উৎপন্ন হয় । রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় তরকারি হিসেবে সজনের ব্যবহার অনেক বেশি। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ না হলেও ওই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িঘরের আশেপাশেই পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয় সজনের গাছ। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন ও গবেষণা একাডেমির অব. পরিচালক ও কৃষি গবেষক একেএম জাকারিয়ার মতে পুষ্টিমান, ঔষুধি গুণ ও বাজার মূল্য বিবেচনায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষের সময় এসেছে। তার মতে সজনের ফল, পাতা, কান্ড সবকিছুর মধ্যেই খাদ্য ও ঔষুধি গুণ বিদ্যমান। হারবাল ঔষুধ প্রস্তুতকারকদেরও দরকার হয় এই গাছটির ফল, পাতা ও কান্ডের। তাই সজনের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হবে লাভজনক। সজনে আবাদের জন্য তেমন গুণ সম্পন্ন মাটি, সার, কীটনাশক বা সেচেরও তেমন দরকার হয়না। কাজেই কৃষি বিভাগের উচিত সজনে চাষাবাদের দিকে জরুরীভাবে নজর দেওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন