নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কান ধরে উঠবসের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দেশের ৮টি জাতীয় ও ৩৫টি জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় ব্যবসায়ীগণ প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না করে কিছু কিছু মিডিয়া একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে ৮টি জাতীয় ও ৩৫টি জেলা ভিত্তিক সংগঠনের আয়োজনে ‘ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সফল নেতা এ কে এম সেলিম ওসমানকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ীরা জানান, এমপি সেলিম ওসমান আমাদের ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলেন এ বিষয়ে নীরব থাকার জন্য। কারণ, প্রধান শিক্ষক ধর্ম নিয়ে যে কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই ঘটনাটি বন্দরের ঐ এলাকায় বিস্তরভাবে জানাজানি হলেও, যাতে আরো ব্যাপকভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে না পরে এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ না পায়।
ঘটনাটি একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে কী পরিমাণ অশান্ত করেছিল যে, ঐ এলাকার মানুষ পবিত্র জুমার নামাজ আদায় না করেই সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে অবস্থান করছিলেন। অবরুদ্ধ ঐ প্রধান শিক্ষককে সেলিম ওসমান এমপি জনরোষ থেকে রক্ষার্থে চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও সেখানে গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি সেখানে এমপি সেলিম ওসমানকে কাছে পেয়ে তার কাছে জীবন বাঁচাতে আবেদন করেছিলেন এবং আনিত অভিযোগ স্বীকারপূর্বক তার (প্রধান শিক্ষক) সম্মতি অনুযায়ী যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তা দৃষ্টিকটু ও দুঃখজনক হলেও ঐ পরিস্থিতিতে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। সেক্ষেত্রে আপনাদের ও সচেতন মানুষের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তিনি তথা সেলিম ওসমান কী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য নাকি তিরস্কার পাওয়ার কথা?
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, যারা বিষয়টি জেনে না জেনে একপেশে ভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাদের কাছেও প্রশ্ন, ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা পুনরায় ঘটে তবে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন রাজনীতিক অথবা কোনো সচেতন মানুষই কী নিজ দায়িত্বে সেখানে যাবেন এবং কোনো অবরুদ্ধকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেন?
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি আসলাম সানি, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল হক, আবদুস সোবহান প্রমুখ।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পিয়ার সাত্তার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হোসেন ও তার মা রিনা বেগমের বক্তব্যের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কটূক্তি করেছে বলে রিফাত ও তার মা রিনা বেগম তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা জানান, সেলিম ওসমান ঐদিন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষের হাত থেকে প্রধান শিক্ষকের জীবন রক্ষা করে ধন্যবাদ পাওয়ার কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা ধন্যবাদের বদলে তাকে তিরস্কার করছি। কারণ, প্রকৃত ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ চাই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসুক।
মুখ খুললেন স্থানীয় কাউন্সিলর
এদিকে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা শিক্ষকের কান ধরে উঠবস’র ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ হান্নান সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ৭১ টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের প্রেক্ষিতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি সমর্থিত এ কাউন্সিলর।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এক প্রতিক্রিয়ায় কাউন্সিলর হান্নান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ মে যা ঘটেছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলবো সেদিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান যা করেছেন তা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয় ছিল। কারণ, তিনি ওই শিক্ষককে সে সময় কান ধরে ওঠবস না করালে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতো, হয়তোবা সংঘর্ষের রূপ নিতো এ কারণে অগণিত লোকের মৃত্যুও হতে পারতো। কিন্তু এমপি সেলিম ওসমান অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সু-কৌশলে তিনি যেভাবে হাজারো উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছেন তাতে তো উনি ধন্যবাদ পাওয়ার কথা, অথচ আজকে দেশজুড়ে তাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
তবে শ্যামল কান্তিকে এর আগে যারা মারধর করেছে লাঞ্ছিত করেছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আর শ্যামল কান্তিও যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে থাকে তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন