শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর ইসলাম সম্পর্কে গণমাধ্যমের ভূমিকা পাল্টে যাচ্ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:২৯ পিএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর আল-নুর মসজিদের ইমাম গামাল ফাউদা হত্যাকাণ্ডের শিকার মুসলিমদের স্মরণ করে ভালোবাসা, ধৈর্য এবং ঐক্যের ডাক দিয়ে একটি আবেগ পূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হামলাকারী সন্ত্রাসী তার শয়তানি আদর্শের মাধ্যমে আমাদের জাতিকে বিভক্ত করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য সাধন হয়নি বরং আমাদের সাথে পুরো বিশ্ব এখন এক হয়েছে। আমরা একই সাথে দেখিয়েছি যে, নিউজিল্যান্ডের ঐক্য ভেঙ্গে পড়ার নয় এবং বিশ্ব আমাদের ভালোবাসা আর ঐক্যের উদাহরণ দেখেছে। আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে পড়ছে কিন্তু আমরা ভাঙ্গিনি।’ তিনি মন্তব্য করেন, ন্যাক্কারজনক এই হামলা চালিয়ে ৫০জন মুসলিমকে হত্যা করার বিষয়টি কোনো তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার ফসল নয় বরং এটি কিছু রাজনীতিবিদ আর কিছু পশ্চিমা একচোখা গণমাধ্যমের ইসলাম বিরোধী প্রচারণার ফসল।
গামাল ফাউদার বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক সাজিয়াহ বাশির উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনার পর থেকে পশ্চিমা গণমাধ্যম সমূহ মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রায়িত করে চলেছে। আর এর মোকাবেলা করার জন্য মুসলিম মতামতের অনুপস্থিতি ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের এধরনের গতানুগতিক প্রচারণা আরো তীব্রতর হয়।’
পশ্চিমা গণমাধ্যম সমূহের ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার এমন অনেক তির্যক উদাহরণ রয়েছে। বার্তা সংস্থা গার্ডিয়ান তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০০৭ সালে করা এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুসলিমদের সম্পর্কে যে সব সংবাদ প্রকাশ হয় তার ৯১ শতাংশই নেতিবাচক। আর ২০১১ সালের করা এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মুসলিমদের নিয়ে করা মাত্র তিন মাসের সকল সংবাদের ৭০ শতাংশ নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার ‘মুসলিম ওয়ান পাথ নেটওয়ার্ক’ নামের একটি সংস্থা এ বিষয়ে ২০১৮ সালে একটি পরিসংখ্যান চালায়। তারা ২০১৭ সালে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি সংবাদ মাধ্যমের খবর যাচাই করে। সেখানে দেখা যায় ইসলাম বা মুসলিমদের সম্পর্কে বলা ছিল এধরনের ৩০০০টি সংবাদে ইসলাম এবং মুসলিমদের পাশাপাশি সংঘর্ষ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসী এবং প্রতিক্রিয়াশীল এধরনের শব্দ ছিল।
২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম সমূহে প্রকাশিত অন্তত ১৪,৩৪৯টি খবরে ইসলাম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার মধ্যে অন্তত ১৩,০০০টি সংবাদে সন্ত্রাস এবং ইসলামি জিহাদ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পরিসংখ্যানটি নেয়া হয়েছে সাংবাদিক খাইরিহা রহমান এবং আজাদে ইমাদির করা ‘রিপ্রেজেন্টেশনস অব ইসলাম এন্ড মুসলিম ইন নিউজিল্যান্ড মিডিয়া’ নামের গবেষণা থেকে নেয়া হয়েছে। এই গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলিমের বিশ্বাস সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বে ভুল ধারণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে এমন নেতিবাচক ধারণা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
খাইরিহা রহমান নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগের একজন অধ্যক্ষ। তিনি বর্তা সংস্থা মিডিয়াওয়াচ কে বলেন, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম সমূহে ইসলাম সম্পর্কিত যত খবর প্রকাশিত হয়েছে তার অন্তত ৭ শতাংশতে ইসলামিক সন্ত্রাস শব্দটির উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, যেখানে কোনো মুসলিম বক্তার বরাত দিয়ে খবর প্রকাশিত হয় তখন বেশিরভাগ খবরে সত্য প্রকাশিত হয়। আর যখন কোনো মুসলিম বক্তার মতামত থাকে না তখন ইসলাম সম্পর্কিত প্রায় সবধরনের সংবাদ নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়।’
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের এমন অবস্থা চলিত বছরের মার্চ মাসের ১৫ তারিখের পর নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হতে থাকে। খাইরিহা রহমান বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম সমূহ কিছুটা ভিন্নতা অবলম্বন করছে। আমি মনে করি তার সঠিক পথের নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেছে। এটি শুধুমাত্র মুসলিম, ইসলাম অথবা ইসলাম ভীতির বিষয় নয় বরং এর মাধ্যমে বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন জনের মতামতের গুরুত্ব দেয়া উচিত।’
বার্তা সংস্থা ‘আরএনজেড’ এর সাবেক সাংবাদিক মোহাম্মদ হাসান একমত হয়ে মিডিয়াওয়াচকে বলেন, ‘এখন নিউজিল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যম সমূহ আসলেই মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি গণমাধ্যম সমূহ মুসলিমদের মতামত তুলে ধরে খুবই ইতিবাচক কাজ করছে।’
মোহাম্মদ হাসান বর্তমানে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডে কর্মরত আছেন, তিনি বলেন, ‘এর পূর্বে নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ গণমাধ্যম মুসলিম মতামত এড়িয়ে চলেছিল।’ তিনি বলেন, ‘যখনই কোথায়ও কোনো সন্ত্রাসী হামলা হত তখন এধরনের খবর প্রকাশের পূর্বে ইসলাম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ এমন পাঁচজন সদস্যের একটি বোর্ড বসত যাদের কেউই মুসলিম নয়। সুতরাং তারা যাই বলুক না কেন তা নেতিবাচক দিকেই মোড় নিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে এরকম বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে এবং তারা তাদের মতামত তুলে ধরছেন। এসব মুসলিম বিশেষজ্ঞের সবাই গভীর জ্ঞান রাখেন এবং তারা সমাজের নিকট বিশ্বস্ত। এর পর যখনই মুসলিম বা ইসলাম সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হবে তখন তাদের মতামত অগ্রগণ্য হওয়া উচিত এবং এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন