যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য সিরিয়ায় রাশিয়ার রিকন্সিলিয়েশন সেন্টারের প্রধান সের্গেই কুরালেংকোর আহ্বান
ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর ব্যবহৃত বিমানঘাঁটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় সৃষ্ট আগুনে চারটি হেলিকপ্টার ও ২০টি লরি ধ্বংস হয়েছে। বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্রাটফোরের প্রকাশিত স্যাটেলাইটে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে। ক্রেমলিন সমর্থক একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, টি-ফোর বিমানঘাঁটির এই হেলিকপ্টারগুলো রাশিয়া ও সিরীয় বাহিনী ব্যবহার করত। জানা গেছে, একটি বড় আগুনের শিখা টি-ফোর বিমানঘাঁটির যানবাহনে ছড়িয়ে পড়ে এবং তেলের ট্যাঙ্কারের বিস্ফোরণের পরে রাশিয়ান হেলিকপ্টারগুলোতে আগুন লেগে যায়। হামলার ঘটনাাটি ঘটে গত সপ্তাহে। উল্লেখ্য, আইএস সমর্থক একটি বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এই ঘটনা প্রথমে উল্লেখ করেছিল। একই দিনে জিহাদি সংগঠনটির যোদ্ধারা টি-ফোর বিমানঘাঁটিতে গ্রেড রকেট ছোড়ার ছবিও প্রকাশ করে। তবে রাশিয়া বলছে, গত সপ্তাহে সিরিয়ার হোমসে টি-ফোর বিমানঘাঁটিতে আগুন লেগে এসব সামরিক যান ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘাঁটিতে থাকা বিমান রাশিয়া ও সিরিয়া উভয়পক্ষ ব্যবহার করত। রাশিয়ার বিরোধীদের এক ওয়েবসাইটে আগুন লাগার কাহিনী জানা যায় প্রথমে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সামরিক যানের মধ্যে রাশিয়ার অ্যাটাক হেলিকপ্টারও ছিল। আর যে ২০টি লরি ধ্বংস হয়েছে, তাতে মিসাইল রাখা ছিল। আগুনে মিসাইল পুড়ে গেছে। কিন্তু স্ট্রাটফোরের সামরিক বিশ্লেষক সিম তাক গত মঙ্গলবার বলেন, এই আগুন দুর্ঘটনাবশত লাগার কোনো সুযোগ নেই। ছবিগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই আগুন দুর্ঘটনাবশত লাগেনি, যেমনটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা দেখে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, আগুনের বেশ কয়েকটি উৎস রয়েছে বিমান বন্দর জুড়ে এবং এটা পরিষ্কারভাবে দেখা যায় রাশিয়া শক্তিশালী হামলার শিকার হয়েছে। এদিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে তিন দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। একইসঙ্গে বিদ্রোহীদেরও যুদ্ধবিরতির মধ্যে আনার জন্য আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মস্কো। বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে ঘুতা ও দারাইয়া এলাকায় গত মঙ্গলবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য সিরিয়ায় রাশিয়ার রিকন্সিলিয়েশন সেন্টারের প্রধান সের্গেই কুরালেংকো এ আহ্বান জানিয়েছেন। এসব এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে মারাত্মক সংঘর্ষ চলছে। তিনি জানান, রাশিয়ার পর্যবেক্ষক ও সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিচ্ছে, আলেপ্পো শহরে হামলার জন্য আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ আল-নুসরা ফ্রন্ট অন্তত ছয় হাজার সন্ত্রাসী জড়ো করেছে। পাশাপাশি ঘুতা এলাকায় সরকারি সেনা অবস্থানে এবং দামেস্কের কাছে আবাসিক ভবনে সন্ত্রাসীরা লাগাতার গোলা বর্ষণ করছে। উল্লেখ্য, সিরিয়ার সেনারা শুক্রবার ঘুতা এলাকায় আল-নুসরা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ১৩টি গ্রাম দখল করেছে। এরপর মস্কো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাল। উল্লেখ্য, গত সোমবার সিরিয়ায় একযোগে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা চালায় আইএস। এতে কমপক্ষে ১৫০ বেসামরিক লোক নিহত হয়। বোমা হামলাগুলোর লক্ষ্যস্থল ছিল বাস স্টেশন, হাসপাতাল ও শহরের বিভিন্ন বেসামরিক লোকের ভবন। বোমা হামলাস্থলগুলো প্রেসিডেন্ট বাশারের শক্তঘাঁটি হিসেবে মনে করা হয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) থেকে বলা হয়, জাবলে হাসপাতালে বোমা হামলায় ডাক্তার-নার্সসহ ৪৩ জন মারা গেছেন। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন সেখানকার রোগী। হুর পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, জাবলে হাসপাতালে শহরের বিভিন্ন এলাকার বোমা হামলায় আহত রোগীরা ভর্তি হয়েছিল। এসব বোমা হামলার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছে আইএস। উল্লেখ্য, সিরিয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭০ হাজার লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বিবিসি, প্রেসটিভি, পার্সটুডে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন