ফের হাজারো বিক্ষোভকারীর আন্দোলনে উত্তপ্ত হংকংয়ের রাজপথ। হংকং সরকার ‘প্রত্যর্পণ বিল’ স্থগিত করলেও দেশটিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রবিবার রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালো পোশাক পরে অন্তত ১০ হাজার বিক্ষোভকারী হংকং-এর চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ দাবি করছেন। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পোস্টার ও সেøাগান দিতে দিতে আন্দোলন করছেন। কারো পোস্টারে লেখা আছে, ‘আমারা হংকংবাসী আমাদের গুলি করবেন না।’ এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং সরকার চাপের মুখে প্রস্তাবিত ‘প্রত্যর্পণ বিল’ স্থগিত করলেও বিক্ষোভকারীদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে, বিভেদ সৃষ্টিকারি এ আইন পুরোপুরি বাতিলই কেবল তাদের সন্তুষ্ট করবে। সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্টের জিমি শাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সরকারকে জানানো দরকার যে, হংকং-এর জনগণ আন্দোলন থামাবে না, এ আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি ল্যাম বলেন, ‘এই বিলের কারণে সমাজে নানা বিভেদ দেখা দিয়েছে।’ তিনি এসময় জানান, আমাদের সরকার এ বিল স্থগিত ও পুনরায় ভাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে হংকংয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। বিলটি বাতিল করার জন্য দেশটির লাখো মানুষ রাস্তায় নামে। এনিয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। মূলত চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত একটি বিলের বিপক্ষে এই বিক্ষোভ। তবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হংকংয়ের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ। হংকংয়ের বেইজিংপন্থি শাসকদের প্রস্তাবিত একটি বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন ও তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। সেখান থেকেই বিক্ষোভে নেমেছে তারা। ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে ব্রিটেন হংকং পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে দেশটিতে এমন সহিংসতা হয়নি। দেশটির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবারের সংঘর্ষে অন্তত ৭২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রত্যর্পণ বিলের কারণ চীন হংকংয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে। হংকংবাসীর এ আশংকার কারণে বিলটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সর্বস্তরের লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে আসে। বলা হচ্ছে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংয়ের হস্তান্তরের পর থেকে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভ। এদিকে বিলটি নিয়ে চীনা সরকার বলছে, এটি বাতিল করা হবে একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ যত দ্রæত সম্ভব জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে শান্তি পুনরুদ্ধারই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আই ক্যাবল নিউজকে বেইজিংপন্থী কট্টর আইনপ্রণেতা অ্যান চিয়াং বলেন, ‘আমাদের কি উচিত না জনগণকে শান্ত করা? আমি মনে করি বিলটি স্থগিত করা খারাপ কিছু না।’ উল্লেখ্য, এই বিলের কারণে চীন তার দেশের সন্দেহভাজন অপরাধীকে হংকং থেকে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করার সুযোগ পাবে। রয়টার্স, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন