ফ্যাশন শো বা ব়্যাম্প ওয়াকের কথা শুনলে যে দৃশ্য মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, বাস্তব জগতে তার ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ জার্মানিতে এক অভিনব প্রদর্শনীতে মুসলিম ফ্যাশনের হাল হকিকত তুলে ধরে হচ্ছে৷
জার্মানির একটি মিউজিয়ামে সমসাময়িক মুসলিম ফ্যাশনের একটি প্রদর্শনী চলছে৷ আধুনিক হলেও তাতে শালীনতার ছাপ রয়েছে৷ তবে এটি কোনো সাধারণ ফ্যাশন শো নয়৷ ফ্রাংকফুর্ট শহরের অ্যাপ্লায়েড মিউজিয়ামে এই ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর মাধ্যমে শালীন অথচ আধুনিক মুসলিম পোশাক তুলে ধরার চেষ্টা চলছে৷ ইউরোপের কোনো মিউজিয়ামে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখা যায় নি৷
ফ্রাংকফুর্টের অ্যাপ্লায়েড মিউজিয়ামের প্রধান মাটিয়াস ভাগনার কে এই প্রদর্শনীকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া তো বটেই, সেইসঙ্গে ইউরোপের অনেক দেশ, অ্যামেরিকা, ইংল্যান্ডের মুসলিম ডিজাইনারদের কাজও তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু৷’
এই প্রদর্শনীতে ৮০ জনেরও বেশি ডিজাইনারের সৃষ্টি করা পোশাক শোভা পাচ্ছে৷ গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিস্কো শহরে প্রথমবার এই প্রদর্শনী হয়েছিল৷ এই প্রদর্শনীতে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পাকিস্তানের স্টাইলের প্রবণতারই সবচেয়ে বেশি প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে৷
তবে এর মধ্যে বেশ কিছু পোশাক ইউরোপীয় ও মার্কিন ফ্যাশান ডিজাইনারদের হাতে তৈরি৷ ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি তরুণীরাই এমন পোশাকের সম্ভাব্য ক্রেতা হতে পারেন৷ ডিজাইনার হিসেবে নাওমি আফিয়া মনে করেন, পোশাক আশাকে শালীনতা প্রত্যেকের নিজস্ব রুচির পরিচয়মাত্র৷ নাওমি বলেন, ‘আমার মতে, শালীনতা অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়৷ এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে৷ কেউ কেউ পুরো শরীর ঢাকতে চান, কেউ বা শুধু হাঁটু পর্যন্ত আবরণ চান৷ আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিষয়টি সত্যি অত্যন্ত ব্যক্তিগত৷’
আধুনিক ফ্যাশনের বাজারে কিছু লেবেল ‘শালীন অথবা শোভন পোশাক’ হিসেবে পরিচিত৷ মুসলিম নারী মাথা ঢাকতে বেশ জটিলভাবে হিজাব পরেন৷ তবুও এটা মানতেই হবে, যে আজকের জগতে ‘শালীন অথবা শোভন পোশাক’-এর সংজ্ঞা ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজ অনুযায়ী বদলে যায়৷ শালীন পোশাকের ধারার উদ্দেশ্য ক্রেতাদের জন্য এমন পোশাক সৃষ্টি করা, যা নারীর শরীর ঢাকে৷ তবে এমন সব পোশাকের প্রেরণা কিন্তু ধর্ম থেকে নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে আসে৷
মুসলিম নারীদের সাঁতারের পোশাক বুরকিনি এমন ধারার জোরালো বৈশিষ্ট্য৷ প্রদর্শনীতে ক্রীড়ার পোশাককেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ মার্কিন তরবারি চালক ইবতিহাজ মহম্মদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নাইকি কোম্পানির ‘প্রো হিজাব’ ধারা সম্প্রতি মুসলিম ক্রেতাদের কাছে বিশাল সাফল্য পেয়েছে৷
প্রদর্শনীতে হাল আমলের মুসলিম স্টাইল ও পোশাক তুলে ধরা হয়৷ তারই একটি ছিল মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা ডিজাইনার বার্নার্ড চন্দ্রনের সিল্ক ও সারোভস্কির ক্রিস্টাল দিয়ে এই উপস্থাপন৷ যেসব ফ্যাশন নিয়ে অনেক কথা হয় কিন্তু সেগুলো উপস্থাপনের তেমন সুযোগ হয় না, সেগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় এখানে৷
তবে শালীন ফ্যাশানের এই ধারাকে কেন্দ্র করে সমালোচনা ও বিতর্কও কম হচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞা ও সমালোচনার ফলে নারীবাদী মোনা হায়দারের মতো এই প্রবণতার অনুগামীরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন৷ তাঁদের মতে, নারীর বেছে নেওয়ার অধিকারের মধ্যেই শালীনতা প্রকাশ পায়৷ একটি ভিডিওতে হায়দার হিজাব নিয়ে সেই বিতর্ক তুলে ধরেন৷
‘শালীন ফ্যাশন’ শিল্পক্ষেত্র দ্রুত ফুলে ফেঁপে উঠছে৷ গোটা বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের ফ্যাশন নিয়ে কোটি কোটি ডলার মূল্যের ব্যবসা চলছে৷ অদূর ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে আরও প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাষ রয়েছে৷ ‘সমসাময়িক মুসলিম ফ্যাশন’ প্রদর্শনীর কিউরেটর জিল ডালেসান্দ্রো বলেন, নারীরা ফ্যাশনের পেছনে বছরে প্রায় ৪,৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করেন৷ এই প্রবণতা নাকি বেড়েই চলেছে৷
ইউরোপ যে সহিষ্ণুতা ও জাতি-ধর্ম-বর্ণের সম্প্রীতির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, ‘সমসাময়িক মুসলিম ফ্যাশন’ প্রদর্শনী তারই ইঙ্গিত৷ সূত্র: ডয়েচ ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন