চট্টগ্রাম ব্যুরো : পছন্দের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাৎক্ষণিক আগামী ৪ জুন ওই ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ এনে এমপি’র বিরুদ্ধে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল (বুধবার) দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সমর্থকেরা। তবে জাহিদুল ইসলামের উপর চড়াও হওয়ার কথা স্বীকার করলেও মারধরের অভিযোগ নাকচ করেছেন এমপি মোস্তাফিজ। বরং জাহিদুল ইসলাম তাকে অপমান করেছেন বলে পাল্টা দাবি করেছেন তিনি। লাঞ্ছিত জাহিদুল ইসলাম প্রাণভয়ে বাঁশখালী ছেড়ে এসে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি’র কথামত তার অনুসারীদের ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ না দেয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ইতোমধ্যে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের এক কর্মকর্তাকে মারধর করার ঘটনায় বাঁশখালীর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
আগামী ৪ জুন বাঁশখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। জাহিদুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার হিসেবে উপজলার বাহারছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন। সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি জানান, এমপি’র পিএস তাজুল ইসলাম তাকে একটি তালিকা দিয়ে সেই অনুযায়ী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য এমপি’র নির্দেশের কথা জানিয়েছিলেন। ওই তালিকা অনুযায়ী আমি প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ না দেয়ায় তারা আমার উপর অসন্তুষ্ট হন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমি বাহারছড়া ইউনিয়নে ছিলাম। এমপি সাহেব আমাকে ইউএনও’র কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গেলে তিনি শুরুতেই উত্তেজিতভাবে আমাকে বলেন, অ্যাই.......(অশ্রাব্য গালি) আমি যাদের দায়িত্ব দিতে বলেছিলাম, তাদের তালিকায় রাখিসনি কেন? আমি বললাম, স্যার, আমি নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কাজ করেছি। এসময় তিনি বলেন, অ্যাই তোরা কোথায়? .........(অশ্রাব্য গালি) মারতে হবে। তখন এমপি নিজেই মা-বাবা ধরে গালি দিয়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন। আমি বলি, স্যার আপনি আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না। তখন তার সন্ত্রাসীরা এসে আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে শুরু করে। এসময় সেখানে বাঁশখালী থানার একজন এস আই ছিলেন। তিনি কোন বাধা দেননি। আমি স্যারকে (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা) ফোন করার জন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করলে পুলিশ কর্মকর্তা সেটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেন। পরে এমপি সাহেব আমাকে বাঁশখালী ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত শহরে চলে এসেছি। আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। এখন কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেয় আমি সেভাবেই কাজ করব।
এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সে আমার কথা শোনেনি। ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। বাঁশখালীর কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া থেকে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের এনে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি যখন তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি সে আমাকে বলল, কাকে দায়িত্ব দেব সেটা কি আপনাকে জিজ্ঞেস করে দিতে হবে? এসময় আমি উত্তেজিতভাবে তাকে দু’চারটা কথা বলি। এখন সে এই ঘটনাকে রং লাগিয়ে প্রচার করছে, আমি তাকে পিটিয়েছি। অথচ কেউ তার গায়ে হাত দেয়নি।
এদিকে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করার পর উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের কারণে বাঁশখালী উপজেলার সব নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এই মামলা করবেন। ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে ৪ জুন সারা দেশে সাত শতাধিক ইউপি’র মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ১৪টি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে তিনটি ইউপি’র ভোট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে স্থগিত করেছিল ইসি। এবার বাকি ১১ ইউপির ভোটও স্থগিত হয়ে গেল।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরসহ ভোটে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন স্থানীয় এমপি। উনার পছন্দসই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জোর খাটানো হয়েছে বলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। সেখানে এখন ভোটের উপযুক্ত পরিবেশ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন