ইনকিলাব ডেস্ক : এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ শিশুর মৃত্যু হয় মায়ের বুকের দুধ না খাওয়ানের কারণে। অপরদিকে বুকের দুধ শিশুকে না খাওয়ানোর ফলে ২০ হাজার মহিলা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত পৃথিবীর সকল শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে বছরে ১৫ লাখেরও বেশি শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারকে মায়ের দুধ ও সম্পূরক খাদ্যের বিষয়ে জোর প্রচারণায় নামতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধে ২০০টি পুষ্টি উপদান রয়েছে। পৃথিবীর আর কোন একক খাদ্যে এতো পুষ্টি নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া শুরু করলে অন্ততঃ ৩৭ হাজার নবজাতকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। অন্যদিকে গুড়ো দুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য শিশু মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। শিশুর জন্য খাদ্য হিসেবে মায়ের দুধ সোনার মানদ- স্বরূপ। সকল গর্ভবতী মাকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বুকের দুধ দেয়ার আগ্রহ বাড়াতে হবে। মা ও শিশুর অপুষ্টি, সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। তাই প্রসব পরবর্তী মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সুনিশ্চিত করতে হবে, যেন তার শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পায়। আমাদের সকলের উচিৎ সব মাকে এই মর্মে সচেতন করা যে, একজন মা একটু ধৈর্যসহকারে চেষ্টা করলেই তার সন্তানকে সফলভাবে বুকের দুধ পান করাতে সক্ষম হবেন। নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে- যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায়, তার জন্য জননীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাবেন। শিশুর পুষ্টি, জীবন ধারণ এবং শারীরিক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত শিশু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবদেহ থেকে সন্তানের জন্য শুধুমাত্র একটি খাদ্য আহরণের ব্যবস্থা রেখেছেন। আর সেটি হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। শিশুর সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বেঁচে থাকার জন্য তিনটি নির্ধারক আছে। এগুলো হলো ঃ নিরাপত্তা, যতœ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ, অকাল মৃত্যু রোধ। এই তিনটির সমন্বয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণই হলো মায়ের বুকের দুধ। মানব সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলার রহমতে প্রতিটি মায়ের বুকে তার অনাগত সন্তানের জন্য খাদ্য প্রস্তুত হতে থাকে। জন্মের সাথে সাথে শিশুকে বুকের দুধ দিলেই শিশু তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা মিটানোর সুধা পেয়ে যায়। প্রথমত তিন অথবা চারদিন শিশু তার মায়ের বুকের যে দুধ পায় তা শালদুধ। শালদুধ পরিমাণে কম। কিন্তু জন্মের পরপর শিশুর অপরিপক্ব পাকস্থলির সীমিত ধারণ ক্ষমতার জন্য যথেষ্ট। এই শালদুধ যে শুধু শিশুর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটায় তা নয়, শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে। যে কারণে শালদুধকে বলা হয় জীবনের প্রথম টিকা। মায়ের দুধ পানে শুধুমাত্র শিশুরাই উপকৃত হয় না বরং মায়েরা, তাদের পরিবার এবং সামগ্রীকভাবে সমাজও উপকৃত হয়। মায়ের দুধ শিশুর জীবন ধারনের প্রথম ছয়মাসে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টিই সরবরাহ করে না বরং পাঁচটি বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। শৈশবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার ফলে পরবর্তী জীবনে সেই শিশু বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকে। শিশুর শারীরিক গঠন ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও মানবিক বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই শিশুকে পরিপূর্ণ পুষ্টি জোগায়। জন্মের পর দুই বছর পর্যন্ত প্রয়োজন হলে তারও বেশি সময় মায়ের বুকের দুধ শিশুর পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্কাই নিউজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন